হেঁটে হেঁটে ছেড়াদ্বীপ থেকে বাংলাবান্ধায় জাফর!

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২০ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
নিরাপদ সড়ক বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করতে সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায় পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করেছেন জাফর সাদেক। এই পদযাত্রায় সাধারণ মানুষসহ সবার সাড়া পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
জাফর সাদেক রূপালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা হলেও নেশায় একজন অভিযাত্রী। তিনি সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতে অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এই পদযাত্রা করছেন। ইতিমধ্যে তিনি ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলব্রুস এবং আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারোসহ হিমালয়ের বেশ কিছু পর্বতে অভিযান করেছেন।
জাফর সাদেক বলেন, গত ২৮ ডিসেম্বর টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত ১৬.১ কিলোমিটার সমুদ্র পথ সাঁতরে পাড়ি দেয়ার মাধ্যমে পদযাত্রা অভিযানের শুরু করি। রবিবার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাবান্ধা পৌছাঁতে তার সময় লেগেছে ২১ দিন। এই সময়ে পাড়ি দিয়েছেন এক হাজার কিলোমিটার পথ।
যাত্রাপথে জাফর সাদেক ১৩টি জেলা পার হয়েছেন। এগুলো হলো- কক্সবাজার, চট্রগ্রাম, ফেনী, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড়।
আরো পড়ুন: ভারতের বদলে তৃতীয় দেশ থেকে ভিসা নেয়ার উদ্যোগ
প্রথম দিন ছেড়াদ্বীপ থেকে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার পথ হাঁটা এবং সাঁতারের মাধ্যমে পাড়ি দিয়ে একরাত সেন্টমার্টিনে বিশ্রাম নেই। ছুটির দিনগুলো কাজে লাগিয়ে ১১ দিনে ঢাকার আবদুল্লাপুর পৌছে যাই। রোজা, তাপপ্রবাহ বৃদ্ধি আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কয়েক মাস বিরতির পর ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে পুনরায় পদযাত্রা শুরু করে ১০ দিনে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বাংলাবান্ধা এসে অভিযানের সমাপ্তি হলো আজ।
এই দীর্ঘ পদযাত্রায় মহাসড়কে নানা বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েছে। নানা শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তাদের সঙ্গে নিরাপদ সড়ক বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই জনবহুল দেশে মহাসড়কগুলো যেন এক মরণফাঁদ। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। চলার পথে এমন ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখেছি। মহাসড়কের পাশে যাদের বসবাস তাদের চলাচলের জন্য অধিকাংশ স্থানেই কোন রাস্তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে মহাসড়কে অটোরিক্সা, সিএনজিসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে। এর ফলে দূরপাল্লার যানবাহন চলার পথে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে।
মহাসড়কের পাশে সার্ভিস লেন থাকলে এই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এতে স্থানীয় মানুষের চলাচলের সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়ক থেকে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রন সম্ভব হবে।
আরো পড়ুন: ফুয়ের্তেভেন্তুরা ভ্রমণে সাগর-সূর্য দেখার এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা
দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে: চালকদের অদক্ষতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেকিং করার প্রবল মানসিকতা, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, জনগণের সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন না মানা ইত্যাদি।
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে- অনেক সড়ক-মহাসড়ক পরিকল্পনাহীনভাবে নির্মাণ, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক বিদ্যমান থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, ভুলপথে গাড়ি চালানো, রাস্তায় চলাচলকারী যাত্রী বা পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে পথচারীদের চলাচল, রাস্তা পারাপারের জন্য ওভারব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার না করা, রাস্তার ওপর বা ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাস্তায় চলাচলে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন প্রতিপালনে যাত্রীদের অনীহা। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা যদি অতি দ্রুত রোধ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় বা এ ব্যাপারে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়, তাহলে আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।