ঠান্ডায় ভিড় বাড়ছে শিশু হাসপাতালে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৪২ এএম

ছবি: সংগৃহীত
বছরের প্রথম দিন থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘনকুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা। বিভিন্ন জেলায় চলছে শৈত্যপ্রবাহ। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। ঠান্ডায় শিশুরা জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
চিকিৎসকদের মতে, চলতি বছরে হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ার কারণে দুই থেকে তিন গুণ বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগই শিশু। বাচ্চারা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদের অ্যাজমাও বেড়ে গেছে। আক্রান্ত অনেক শিশুকে দেরিতে তাদের কাছে আনা হচ্ছে। আগেই অভিভাবকরা স্থানীয় ফার্মেসির ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এতে শারীরিক জটিলতা বাড়ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, কলেরা হাসপাতালসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত রোগীর চাপ বেড়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালে আসা সর্দি-জ্বরে আক্রান্তদের অধিকাংশই শিশু। এছাড়াও সেখানে বহির্বিভাগে প্রতিদিন সেবা নিতে আসা জ্বর, ঠাণ্ডা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হালিমা আক্তার বলেন, আমার ছেলেটার বয়স নয়বছর। চার-পাঁচ দিন ধরে ঠান্ডা-কাশি, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্বাসকষ্ট। সাত-সকালে স্কুলে যায়, তখন ঠান্ডা বাতাস কানে লাগে। এজন্য ঠান্ডা লেগে গেছে। কানে টুপিও পরতে চায় না। বনশ্রীর শায়লা রহমান বলেন, আমার আড়াই বছরের মেয়ে লাবনী তিন দিন ধরে ভুগছে ঠান্ডা-জ্বরে। শায়লা বলেন, ঠান্ডায় ওর দুটো নাকই বন্ধ হয়ে আছে। ১০০/১০১ ডিগ্রি এমন জ্বরও আছে। খাওয়া-দাওয়া করছে না একদম, সারা দিন কান্নাকাটি করে। রুবেল ও লাবনীর মত অনেক শিশুকেই শনিবার দেখা গেল শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে। বেশির ভাগই এসেছে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে। এসব শিশুর অভিভাবকরা বলছেন, শীতের শুরু থেকেই তাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমবেশি লেগেই আছে।
শনিবার শিশু হাসপাতালে দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন মালিহা কেয়া, থাকেন পুরান ঢাকায়। তিনি বললেন, বাচ্চাটার অনেক ঠান্ডা লাগছে, কোনোভাবেই সারছে না। ডাক্তার দেখাইলাম। রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্সরে দিছে, দেখি রিপোর্টে কী আসে। শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন টিপু আহমেদ। এক সপ্তাহ ধরে তার সন্তানের ঠান্ডা ও কাশি হওয়ার কথা বললেন তিনি। হাঁচি, কাশি চলতেই আছে। বুকে গড়গড় শব্দ হয় খালি। ভাবছিলাম আস্তে আস্তে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে, না পেরে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। নিউমোনিয়া হয়ে গেছে কি না, চিন্তা হচ্ছে। দেখি ডাক্তার কী বলে।
মিরপুরের ১২ নম্বর এলাকার শাকিল আহমেদ বলেন, শীতের শুরুতেই তার দুই ছেলের ঠান্ডাসর্দি লেগে যায়। মাঝে বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে। সবসময়ই শীত আসলে ওদের ঠান্ডা লাগে। নিয়মিত নেবুলাইজিং করাচ্ছি, গরম পানি খাওয়াচ্ছি, যাতে বাতাস না লাগে ওই রকমভাবে বাইরে বের হতে দিচ্ছি। এমনি ঠিক হয়ে যাবে, তাই আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাইনি।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বলেন, হাসপাতালটিতে মোট রোগীর সংখ্যা কমলেও বর্তমানে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগী। গত ডিসেম্বর থেকেই এমন রোগী আসছেন বলে জানান তিনি।
শীতের রোগবালাই থেকে সুরক্ষার ব্যাপারে এই চিকিৎসক বলেন, ঠান্ডার সময় তো ঠান্ডা লাগবেই। শীতের সময় ধুলাবালি উড়ে বেশি। ধুলা আর ঠান্ডা মিলে শ্বাসকষ্ট উঠে যায়। ছোট শিশুদের বাইরে বের করা যাবে না। বের হলেও মাথা ঢেকে দিতে হবে, মাস্ক পরবে। ঠান্ডা কাটিয়ে নিয়ে নরমাল পানি খাওয়াতে হবে, আর উষ্ণ পানিতে গোসল করাতে হবে।