মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে পর্যটন নতুন যুগে প্রবেশ করবে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৪০ পিএম

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন দিবসের আলোচনায় বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। ছবি: ভোরের কাগজ









বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেছেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে তা জিডিপিতে ১০ শতাংশ অবদান রাখবে। এ বছরের ডিসেম্বরে এই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। ট্যুরিজম মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পর্যটন নতুন যুগে প্রবেশ করবে।
বিশ্ব ট্যুরিজম দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটনে নতুন ভাবনা প্রতিপাদ্যে পর্যটন ভবনে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার শুরুতে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটন ভবনের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ট্যুর অপারেটর সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে মন্ত্রী বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের খাদ্য উৎসব ও লাইভ কুকিং শো উদ্বোধন করেন। এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী আয়োজন শেষে তিনটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
বেসামরিক বিমান পরিবহন পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সন্তোষ কুমার দেব। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আলী কদর, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য র. আ. ম ওবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন, টুরিস্ট পুলিশের প্রধান ডিআইজি ইলিয়াস শরীফ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রেজাউল করিম এবং ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি শিপলুল আজম কোরেশী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. অলিউল্লাহ। আলোচনা সভা শেষে সারাদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রের তোলা ছবি নিয়ে প্রতিযোগীদের বিজয়ীদের মাঝে তিন ফটোগ্রাফারকে পুরস্কার তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব।

মাহবুব আলী বলেন, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত এসেছে। মূল্যবোধগুলোকে পদাঘাত করা হয়েছে। সময় এসেছে এগুলো রিকভারি করার। আমাদের মূল্যবোধ ধরে রাখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা ধারণ করে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট খেলায় দেখা যায় অনেক সময় মেডেনওভার যায়, যেখানে কোনো রানই করতে পারে না। আবার এমনও পরিস্থিতি দাঁড়ায়, ছয় বলে ৩৬ রান করা যায়। সুতরাং আমাদের সামনে সেই সুযোগটা রয়েছে ছয় বলে ৩৬ রান করার। আমাদের সমস্ত উপকরণ আছে, ইচ্ছেও আছে।
পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা কাজ করছি। বিশ্বে আমরা গার্মেন্টস রপ্তানির ক্ষেত্রে তৃতীয় হয়েছি। এটা অনেক শক্তিশালী প্রতিযোগিতা। আবার এক মাসের ব্যবধানে আমরা দ্বিতীয়তে এসেছি।
তিনি বলেন, পর্যটনকে কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশ বহু দূর এগিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা এর চেয়ে বেশি তথ্য উপাত্ত রয়েছে। অনেকের বক্তব্যই এসেছে এটি সবার সামনে তুলে ধরার জন্য। সামনে আমরা আরও চেষ্টা করব দীর্ঘ সময় পরিকল্পনা করে এই আয়োজন করার। একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে পর্যটনের জন্য ডেডিকেটেড করার চেষ্টা করব।

পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই কার্যক্রম প্রতিটি শহরে শহরে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের মধ্যে প্রতিভা আছে, সেটাতো সবাইকে জানাতে হবে। নিজের মধ্যে রাখলেতো হবে না। আমাদের দেশে যে সম্পদ আছে, প্রতিভা আছে তা সবাইকে জানাতে হবে। আমরা পর্যটনকে একটা টার্গেট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা যথাসম্ভব আমাদের টার্গেটে পৌঁছাব। এটাই হোক আমাদের আজকের পর্যটন দিবসের প্রতিশ্রুতি।
র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, অনেকেই মনে করে বাংলাদেশে শুধু সুন্দরবন আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেও যে একটি সুন্দরবন আছে তারা জানে না। দিন দিন বাঘের সংখ্যা কমছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে বাঘ পশ্চিমবঙ্গের অংশে থাকা সুন্দরবনে চলে যাচ্ছে। আমাদের এখানে বাঘের সংখ্যা কমছে কলকাতায় বাড়ছে।
মোকাম্মেল হোসেন বলেন, কোভিড পূর্ববর্তী যে অব্যবস্থা ছিল আমরা সেখানে যেতে চাই না। তার চেয়ে অনেক এগিয়ে যেতে চাই। পর্যটনের উন্নয়নে মিডিয়া বেশি ভূমিকা রাখে।
গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, আমি অনুরোধ করব দেশের স্বার্থে আমরা যেন ইতিবাচক খবর প্রকাশ করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবার সঙ্গে আলোচনা করে পর্যটন নিয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়েছে। ডিসেম্বরে সেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে যাব।
উদ্বোধনী আয়োজন শেষে পর্যটনে নতুন ভাবনা: বাংলাদেশের বিনোদন পার্ক শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বাপা’র সমন্বয়কারী উজ্জল কুমার বসাকের সঞ্চালনায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচনায় অংশ নেন নন্দন পার্ক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক নাহাস পাশা, ভিন্ন জগত এমিউজমেন্ট পার্ক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তৌহিদ আহমেদ বাপ্পী। মূল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব এমিউজমেন্ট পার্ক এর উপদেষ্টা জি এম মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক অনুপ কুমার সরকার।

বক্তারা বলেন, করোনার কারণে বাংলাদেশের বিনোদন পার্কগুলো একবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। করোনাকালীন নানা খাতকে সরকার প্রণোদনা দিলেও এই খাতকে কোনো প্রণোদনা দেয়নি। এই খাতকে আন্তর্জাতিক মানের করতে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়।

গন্তব্যে নিরাপত্তা ঝুকি : বাংলাদেশ টুরিস্ট পুলিশের করণীয় শীর্ষক অপর এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার (প্লানিং অ্যান্ড অপারেশন) সরদার নূরুল আমিন। আলোচনা করেন ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াব) সভাপতি শিবলুল আজম কোরেশী, ঢাকা রিজিওনের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার ড. মো. আশরাফুর রহমান, ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মো. ইলিয়াস শরীফ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের।
বক্তারা বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ১০৫টি এলাকায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পর্যটন স্পটগুলোতে এ বিষয়টি একটি স্পর্শকাতর ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়। বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশকে আধুনিক পর্যাপ্ত ও ভারসাম্যপূর্ণ আইনি অধিকার এবং তা প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে এবং এই বাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত দেশি-বিদেশী প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরী। এক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সেবার মান, সংস্কৃতি ও গুণগত সহযোগিতা প্রদানে সক্ষমতা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ও জাতির পিতার সোনার বাংলা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। এজন্য সবাইকে এক ছাতার নিচে আসবে হবে।
এ ছাড়া পর্যটন সংশ্লিষ্ট যোগাযোগ খাতের অংশীজনদের নিয়ে অপর এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়।