হাইব্রিডদের ‘রেডকার্ড’

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ০৯:০০ এএম
আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতৃত্বে না আনার নির্দেশ হাইকমান্ডের
টানা তৃতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগ। গত ১৩ বছরে ক্ষমতাসীন দলে অনুপ্রবেশ করেছে অসংখ্য লোক। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এসব হাইব্রিড আওয়ামী লীগারই এখন দলের মাথাব্যথা। হাইব্রিডদের কারণে একদিকে কোণঠাসা ত্যাগীরা, অন্যদিকে এদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সময় বদনাম হচ্ছে দলের, বিব্রত হতে হচ্ছে সরকারকে। হাইকমান্ডের বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না হাইব্রিডদের। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চান না নীতি-নির্ধারকরা। এক্ষেত্রে দলের সব ধরনের নেতৃত্বে হাইব্রিডদের ‘রেডকার্ড’ দেখানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা। এই প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা।
সম্প্রতি দলের নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় বলা হয়েছে, দলে হাইব্রিড এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা। ফলে তৃণমূলের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইব্রিডের কারণে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। অনুপ্রবেশকারী এবং সুবিধাবাদীদের দাপটে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ভোরের কাগজকে বলেন, দুর্নীতিবাজদের কোনো ধরনের ছাড় নয়। বর্তমানে সারাদেশে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সম্মেলন হচ্ছে। এসব সম্মেলনেও বিতর্কিতদের দলীয় পদ দেয়া হচ্ছে না। আগামী নির্বাচনেও দুর্নীতিগ্রস্তরা নৌকার টিকেট থেকে বঞ্চিত হবেন। কোনো দুর্নীতিবাজকে ছাড় দেয়া হবে না।
সূত্রমতে, হাইব্রিডদের মধ্যে ৭০ ভাগই বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা। বাকি ৩০ শতাংশ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন সময় তারা দলের মধ্যে ঢুকেছে। এদের অধিকাংশই সুযোগসন্ধানী। এসব সুযোগসন্ধানীদের ‘মুজিব কোট’ এর ছড়াছড়িতে কোণঠাসা দুর্দিনের নৌকার কাণ্ডারিরা। অন্যদিকে এদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দেশ-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ম্লান হচ্ছে। বিভিন্ন সময় অনুপ্রবেশকারী সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান থেকে রিজেন্টের শাহেদ করিম, জেকেজির ডা. সাবরিনা চৌধুরীর কর্মকাণ্ড সরকারের সাফল্যগাথাকে ম্লান করেছে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই। আসন্ন নির্বাচনের আগে দল গোছাতে এসব হাইব্রিডদের বাদ দিয়ে ত্যাগীদের মূল্যায়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা।
দলটির সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের মধ্যে অন্তঃকলহ দূর করতে হবে। দলের দুঃসময়ের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আওয়ামী লীগে বসন্তের কোকিলদের নেতা বানানো যাবে না। দল যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকে তাহলে নির্বাচনে সফলতা আসবে না। তাই অবশ্যই দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব দূর করতে হবে।
এদিকে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে যে ২০১টি সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে; এর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে মোট ২৫টি। গত বছর ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ তার সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে ৯৬টি। ২০২০ সালে তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাত হয়েছে ৭৪টি। এসব সংঘর্ষের পেছনে হাইব্রিডদের দৌরাত্ম্যকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, দলের ভাবমূর্তির যারা ক্ষতি করবে, তারা দলের কোনো পর্যায়ে পদ পাবে না। যারা দুঃসময়ে দলকে সুসংগঠিত করেছেন, নেত্রীর প্রতি আস্থাশীল থেকে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন সেসব ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার জন্য আমাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে। যারা যোগ্য, যাদের দ্বারা দল এগিয়ে যাবে, তারাই দায়িত্ব পাবে।