×

জাতীয়

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা দুদকের!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০১৮, ১০:৫৩ এএম

জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহা দুদকের!
   
সম্প্রতি অর্থপাচার নিয়ে সারা বিশ্বে হৈ চৈ ফেলে দেয়া পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি এবং অপরটি প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িত বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনীহ দেখাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পানামা পেপারসে জড়িতদের দুদক তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও প্যারাডাইস পেপারসে জড়িত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পরিবারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ হওয়ার চার মাস অতিবাহিত হলেও দুদক তাদের তলব অথবা অভিযোগ খতিয়ে দেখার বিষয়ে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। বিদেশে অবৈধভাবে বিনিয়োগকারীদের একটি তালিকা প্রকাশ হয় ২০১৬ সালের ৩ এপ্রিল। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পাওয়া এই তালিকায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান, প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের নাম ছিল। এ তালিকায় ১৪ বাংলাদেশির নাম প্রকাশ পায়। তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল দুদকের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভুঁঁইয়ার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। ওই বছরের ২ মে পানামা পেপারসে নাম আসা ১১ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে স্বাধীন সংস্থাটি। এদের মধ্যে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। কিন্তু দুদকের পক্ষ থেকে এখনো কোনো মামলা বা অন্যকোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পদক্ষেপ নিতে না পারায় দুদক কর্মকর্তারা দুষছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগকে (বিএফআইইউ)। তাদের দাবি, পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিস্তারিত তথ্য বিএফআইইউর কাছে চেয়েছিল দুদক। দীর্ঘদিনেও তথ্য সরবরাহ করেনি দায়িত্বশীল সংস্থাটি। এ কারণে ঝিমিয়ে পড়েছে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও আইনি ব্যবস্থার বিষয়টি। এ বিষয়ে অনুসন্ধান দলের প্রধান দুদকের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভুঁইয়া ভোরের কাগজকে বলেন, দুদক থেকে পানামা পেপারস সংশ্লিষ্ট কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চাওয়া হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। তাই এ বিষয়টি বর্তমানে আগের অবস্থায়ই আছে। কোনো অগ্রগতি নেই। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইনি জটিলতা ও তথ্য না পাওয়াকে ‘কারণ’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসা বাংলাদেশিদের বিষয়ে গত পৌনে দুই বছরেও কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেনি দুদক। প্যারাডাইজ পেপারস কেলেঙ্কারিতে যাদের নাম এসেছে তাদের ক্ষেত্রেও একই জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় নিরাপদই থেকে যেতে পারে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। পানামা পেপারসের রেশ কাটতে না কাটতেই যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, রাজনীতিকের নাম প্রকাশ হয়েছে একই ধরনের বিনিয়োগের বিষয়ে। গত বছরের ১৯ নভেম্বর প্রকাশ হওয়া তালিকাটি প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি পেয়েছে। এরা সবাই নিজ দেশে কর ফাঁকি দেয়ার জন্য, কর দিতে হয় না বা দিলেও খুবই স্বল্প হারে দিতে হয় এমন দেশে (ট্যাক্স হ্যাভেন) অর্থ বিনিয়োগ করে রেখেছেন। এই তালিকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর পরিবারসহ ২১ বাংলাদেশির নাম আসে। এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও জানা যায়। প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারি প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনায় হয়। এমপিরা অফশোর কোম্পানিতে টাকা বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি জানান অর্থমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু গত ১৯ নভেম্বর এই সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও দুদক তাদের তলব করা বা অভিযোগ খতিয়ে দেখার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যাতে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফেরত আনা যায়, সেজন্য উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এ ছাড়া এনবিআর এবং দুদককেরও উদ্যোগ নিতে হবে। পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তি ও কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসায় উদ্বেগ জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একই সঙ্গে বিভিন্নভাবে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে এনে সংশ্লিষ্টদের বিচারের মুখোমুখি করারও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ২১ নভেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে বাংলাদেশের যে সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে, সে বিষয়ে জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনসহ আন্তর্জাতিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তার মাধ্যমে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে জড়িতদের অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিদ্যমান আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় দুর্নীতি-সহায়ক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মূলত কর ফাঁকি দেয়ার উদ্দেশ্যেই দেশের বাইরে নামে-বেনামে ব্যাপক অর্থ পাচার করছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে, এমন অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, সব দুর্নীতিই দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। মানি লন্ডারিং আইনে কমিশনের কিছু সমস্যা আছে। সব মানি লন্ডারিং দুদক দেখতে পারে না। মানিলন্ডারিং আইন ও দুদক আইন সংশোধনের মাধ্যমে বেসরকারি ব্যক্তিদের জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা, অর্থপাচারসংক্রান্ত অপরাধ, দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে তফসিল বহির্ভূত করা হয়েছে। ফলে পানামা পেপারস কিংবা প্যারাডাইজ পেপারস দুর্নীতিতে যে সব বেসরকারি ব্যক্তির নাম এসেছে, তাদের অনুসন্ধান করা কমিশনের জন্য কিছুটা জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপরও কমিশন দেশের স্বার্থে ও জনগণের প্রত্যাশাকে সামনে রেখে অবৈধ সম্পদ খোঁজার মাধ্যমে তাদের অবৈধ সম্পদ পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে। গত ১ এপ্রিল দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জবাবদিহিমূলক প্রশাসন ব্যবস্থাপনা : দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের প্রধান নিয়ামক’ শীর্ষক সেমিনারে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারস কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বিষয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App