বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়, সংকটে মধ্যবিত্ত

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত
২০২২ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় ১০.০৮ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। জীবনযাত্রার ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় সংকটে আছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। অন্যদিকে আয় না বাড়ায় জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। চাল, ডাল, তেল, চিনি, মাছ, মাংস, সবজি থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম দফায় দফায় বেড়েছে। ঢাকা মেগাসিটিতে মূল্যস্ফীতির চাপ বিষয়ে ক্যাবের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর আগের বছরের (২০২১) হিসাব অনুযায়ী জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছিল ৬.৯২ শতাংশ। এ হিসাবে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার হার ৩.১৬ শতাংশ। ২০২২ সালে ঢাকা মেগাসিটিতে মূল্যস্ফীতির চাপ বিষয়ে ক্যাবের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার (২১ জানুয়ারি) এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ক্যাব।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবরে মানুষের আয় বেড়েছিল ৫.৯৭ শতাংশ। গত বছরের অক্টোবরে আয় বেড়েছে ৬.৯১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে আয় বেশি বেড়েছে ০.৯৪ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার ৫.৭০ থেকে বেড়ে ৮.৯১ শতাংশ হয়েছে। তবে বিবিএসের মূল্যস্ফীতি ও আয় বাড়ার তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাধিক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। এতে ভোক্তার নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। ব্যয় বাড়ার অসংখ্য কারণ আছে, যা আমরা অনেকেই জানি। ব্যবসায়ীদের লোভ বেড়ে গেছে। তারা বেশি মুনাফা করছে। কম মুনাফায় এখন আর তারা সন্তুষ্ট নয়। এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর পড়ছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি—এসব নানা কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এতে মানুষের ব্যয়ও বাড়ছে।
গোলাম রহমান বলেন, মানুষের আয়-রোজগার যখন বাড়ে তখন নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়লেও তা সহনীয় হয়। কিন্তু অনেক মানুষের আয়-রোজগার বাড়েনি। কর্মজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন। গত বছর খারাপ গেছে, এই বছর ভালো যাবে, তারও কোনো আশার আলো দেখছি না। ভোক্তারা সংগঠিত নয়। আবার তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের হাতে তারাই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকায় ১৫টি খুচরা বাজার এবং বিভিন্ন সেবার মধ্য থেকে ১১৪টি খাদ্যপণ্য, ২২টি নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং ১৪টি সেবার তথ্য-উপাত্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ঢাকায় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের প্রথম মাসের তুলনায় ১০.০৮ শতাংশ বেশি ছিল। যদিও গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি আর খাদ্যবহির্ভূত অংশের তুলনায় কম ছিল যথাক্রমে ১০.০৩ ও ১২.৩২ শতাংশ, উভয়ই দুই অঙ্ক স্পর্শ করেছে। তবে সাধারণ পরিবারের তুলনায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর গড় মূল্যস্ফীতির চাপ ৯.১৩ শতাংশ কম ছিল।
ক্যাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বার্ষিক খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির তুলনায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ১০.৪১ ও ৭.৭৬ শতাংশ কম ছিল, যদিও উভয় শ্রেণির পণ্য ও সেবা মৌলিক প্রকৃতির ছিল। ২০২০ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ, ২০১৯ সালে এই হার ছিল যথাক্রমে ৬.৫০ শতাংশ। এ ছাড়া ২০১৮ সালে জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬ শতাংশ।
বিবিএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি গত আগস্টে সর্বোচ্চ ৯.৫২ শতাংশ উঠেছিল। এর পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই হার কমে ৮.৮৫ শতাংশে নেমেছে। কিন্তু আলোচ্য এ সময়ে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে।
ক্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী ২০১১ সালের পর গত বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, যা বাংলাদেশের লাখ লাখ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়েছে।
সুপারিশে ক্যাব বলছে, মৌলিক জ্বালানি পণ্য, বিশেষ করে ডিজেলের ওপর আবার ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে, কারণ এটি সেচ এবং জনসাধারণ ও পণ্য পরিবহন খরচের একটি বড় অংশ নির্ধারণ করে। এ ছাড়া বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পর্যবেক্ষণ বাড়ানো উচিত। সিন্ডিকেট ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ক্যাব ও গণমাধ্যমকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, উচ্চমূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ আগামী বছরজুড়েও থাকবে। পণ্য সরবরাহ যত দূর সম্ভব স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ দিয়ে যত দূর সম্ভব আমদানিনির্ভরতা কমানো যায়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে।