গণমাধ্যমকে কোয়ালিটি দিয়েই বাঁচতে হবে: মোজাম্মেল বাবু

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

মোজাম্মেল বাবু
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে দেশের গণমাধ্যম নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কী সেই চ্যালেঞ্জ? এ নিয়ে ভোরের কাগজকে অভিমত জানিয়েছেন এডিটরস গিল্ডের সভাপতি ও একাত্তর টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু। তার সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের সিনিয়র রিপোর্টার ঝর্ণা মনি।
প্রথমে গণমাধ্যমকে যদি ভাগ করি- প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্টনিক মিডিয়া, অনলাইন মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া। এখন মানুষ খবরের জন্য টিভি দেখবে না, পেপার পড়ে না, পোর্টালও ডিঙ্গিয়ে চলে গেছে। সংবাদের জন্য বেশি নির্ভর করে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর। মানুষের সময় এখন কম। ৯টা, ৫টা সংবাদ দেখার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে তার মতো করে সোশ্যাল মিডিয়া দেখে নেয়। হয়তো মেইন স্ট্রিম মিডিয়াই দেখে। সংবাদ দেখে।
সোশ্যাল মিডিয়ার উড়ো খবর রয়েছে। সেটি একটি পার্ট। কিন্তু আমি বড় চ্যালেঞ্জ মনে করি না। সোশ্যাল মিডিয়ার উড়ো খবরে মানুষের আস্থা নেই। মানুষের আস্থা আবার মেইন স্ট্রিম মিডিয়াতেই। মেইন স্ট্রিম মিডিয়া দেখার জন্য মানুষ আবার সোশ্যাল মিডিয়াকেই বেছে নিচ্ছে। যেমন, আমি আমাদের একাত্তর টিভির কথাই বলি- যত মানুষ একাত্তর টিভি দেখেন, এরচে’ অনেক বেশি মানুষ একাত্তরের ইউটিউব এবং ফেসবুক পেজ ফলো করেন। তার সময়মতো দেখেন। এটি নতুন ফেনোমেনো।
সোশ্যাল মিডিয়ার আবার একটি ক্যারেকটার আছে। এটি তৈরি হয়েছিল ফ্রি স্টাইল মিডিয়া হিসেবে। সেখানে ন্যায়নিষ্ঠতা, সত্যনিষ্ঠতা, বস্তুনিষ্ঠতার কোনো বালাই নেই। মূলধারার মিডিয়াগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে ওইরকম একটু চটকদার করে, একটু টুইস্ট করে, একটু ব্যাঙ্গাত্মক, একটু ঋণাত্মক নিউজ করে দিচ্ছে। এমনিতেই রাজনীতি, বিশ্লেষণধর্মী নিউজের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। মানুষ খালি নেগেটিভ, ক্রাইম, খুন এসব নিউজ পড়তে চায়। আবার সাফল্যের গল্পও শুনতে চায়। মেইন স্ট্রিম মিডিয়াকেও এসব কাস্টমাইজ করতে হচ্ছে চটকদার নিউজের জন্য। আমার কষ্ট হয়, মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার যে দায়িত্বশীল আচরণ- এটি থেকে বেরিয়ে ভাইরাল হওয়ার জন্য, হিটের জন্য, জনপ্রিয়তার জন্য, লাইকের জন্য তারা পাগল হয়ে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার উড়ো খবরের সঙ্গে তারা জিতলেও, মানুষের আকষর্ণের জন্য অনেক ক্ষেত্রে নিজের রুচিকে নিচে নামাতে হচ্ছে! পুরানো দিনের হক কথা টাইপ কিংবা লিফলেটের যুগে চলে যেতে হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানী ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনের গুরুত্ব যে একেবারেই কম নয়, তা নয়।
মিডিয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। তাদের টিকতে হলে একদিকে যেমন সস্তা, চটকদার জিনিস দিতে হবে, তেমনি অন্যদিকে কোয়ালিটি বাড়াতে হবে। কোয়ালিটি দিয়েই বাঁচতে হবে। কোয়ালিটি বাড়ানোর ঝুঁকিতে পড়ে গেছে মিডিয়া। টেলিভিশনগুলোর একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপন এখন কমে যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনমুখিনতা কমাতে হবে। টেলিভিশনগুলোকে একসঙ্গে ডিজিটাইজ করতে হবে। লোকাল চ্যানেলগুলোকে একটা বুকের মাধ্যমে মনিটাইজ করে পে চ্যানেলে পরিণত না করলে এই যুগে ট্র্যাডিশনাল চ্যানেল বাঁচবে না।
পত্রিকার চ্যালেঞ্জ আরো বড়। কাগজের দাম অনেক বেশি। বিক্রি থেকে অর্ধেক টাকাও ওঠে আসে না। পোর্টাল থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিল পেপার। কিন্তু পোর্টালও প্রায় অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। পোর্টাল থেকে লাফ দিয়ে মানুষ ইউটিউবে চলে গেছে। প্রিন্টমিডিয়াকে বাঁচতে হলে একসঙ্গে কনভারজেন্সে যেতে হবে। মানে একটি নিউজ গ্যাদারিং সিস্টেম যেখান থেকে কয়েক ধরনের নিউজ বের হবে। ইউটিউব, পত্রিকা, পোর্টাল, ফেসবুক একসঙ্গে সব চালাতে হবে। টেলিভিশন, পত্রিকা এবং পোর্টাল সংগঠনগুলো একসঙ্গে মিলে ইন্টারনেট উপযোগী নিজস্ব সুইমিং ইঞ্জিন চালু করতে হবে।
সর্বোপরি মান উন্নয়ন করতে হবে। প্রতিযোগিতা অনেক বড়। কনটেন্টের প্রাচুর্যে নতুন কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। মনিটাইস থাকতে হবে এবং ডিজিটালাইজডভাবে নিজস্ব পে টিউবে পরিণত করতে হবে। তবেই লাভের মুখ দেখবে মিডিয়া।