র্যাব হেফাজতে থাকা নারীর মৃত্যু মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম

সুলতানা জেসমিন। ফাইল ছবি
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ।
গত শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চিকিৎসাধীনে মারা যান তিনি।
কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে কালবেলাকে বলেন, ওই নারী র্যাবের কাস্টডিতে ছিলেন। সম্ভবত পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। মাথার ডানপাশে তার আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে আঘাতটি খুব বড় ধরনের আঘাত না। পড়ে গেলে যেমন আঘাত পায় ঠিক তেমন। রামেক হাসপাতালে যখন ওই নারীকে নিয়ে আসা হয় তখন অচেতন ছিলেন তিনি। পরে তাকে নিউরো সার্জারি বিভাগ থেকে আইসিইউতে পাঠাই। এরপর সঙ্গে সঙ্গে তার সিটিস্ক্যান হয়। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে তার ‘ইন্ট্রাক্যানিয়েল হিমোরেজ’ ধরা পড়ে। অর্থাৎ তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তার ব্রেনের ছোট-বড় মিলে বিভিন্ন জায়গায় এই রক্তক্ষরণ হয়েছিল। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে রামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, মাথায় আঘাত করলে কিংবা মারধর করলে বিভিন্ন ধরনের যে লক্ষণ থাকে সে ধরনের কোনোকিছু ছিল না। শুধু তার মাথায় একদিকে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার হাইপার টেনশনের হিস্ট্রি ছিল এবং যখন তাকে ভর্তি করা হয় তখন ব্লাড সুগার লেভেলও বেশি (১৪) ছিল। অর্থাৎ তার ডায়াবেটিসের মাত্রাও বেশি ছিল। মারা যাওয়ার পর তার পোস্ট মর্টেম হয়েছে। মাথায় আঘাতের চিহ্নটা কীভাবে হয়েছে এটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পরিপূর্ণ ধারণা পাওয়া যাবে।
এদিকে র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুলতানা জেসমিনকে গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তিনি।
তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।
নিহত সুলতানার মামা নাজমুল হক বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। ওইদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে যায়। তবে তাকে র্যাবের কোন ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছিল তা তারা জানতেন না। ওইদিন দুপুর ১২টার পর জানতে পারেন, সুলতানা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে গিয়ে তিনি র্যাবের লোকজন দেখেন। কিন্তু তার ভাগনি কোনো কথা বলতে পারছিলেন না। কিছুক্ষণ পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে শনিবার দুপুরের পর।