হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৪১ এএম

ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের মতে, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের মালিক জনগণ। জনগণ জানতে চায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত ছিল, কারা পরিকল্পনা করেছে, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে? এজন্য তদন্ত কমিশন গঠন করা জরুরি। কারণ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তথ্য জনগণ বিক্ষিপ্তভাবে জানে। সমন্বিত করে জনগণের কাছে উপস্থাপন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে ভোরের কাগজকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন গঠন করে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান এই শিক্ষাবিদ।
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হত্যাকাণ্ডে বিচারিক আদালতে বিচারের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কমিশন হয়েছে, যাতে পুরো ষড়যন্ত্র উন্মোচন হয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের সাতদিন পর কমিশন হয়েছে। ওই রিপোর্ট আমেরিকাবাসীর যে কেউ এখনো পড়ে দেখতে পারেন, কেনেডি হত্যাকাণ্ডে কি ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এমনিভাবে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী হত্যাকাণ্ডে কাপুর ও পাঠক কমিশন, ইন্দিরা গান্ধী হত্যাকাণ্ডে কাক্কার কমিশন, রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের পর ভার্মা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। এই কমিশন কেন গঠিত হয়? কারণ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা তখন প্রশ্নের সন্মুখীন হয়। রাষ্ট্র বারবার এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় পড়তে চায় না। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পুরো ষড়যন্ত্র জাতি জানতে চায়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে শুধু কিলিং মিশনে যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের বিচার হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীদের কারো বিচার হয়নি। নেপথ্যে যারা ছিল, তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যায়নি। তাদের কোনো তদন্ত হয়নি। রাষ্ট্রপ্রধান যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, এটি কোনো ব্যক্তি হত্যাকাণ্ড থাকে না। পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। ভেঙে পড়ে। আর এজন্যই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটে। কারা এর পেছনে আছে, কিভাবে ঘটল, কিভাবে ষড়যন্ত্র সাজানো হলো, বাস্তবায়ন করা, পুরো পরিবার হত্যা করা হলো এর মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। এটি আমরা এখনো করতে পারিনি।
শিক্ষাবিদ আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পুরো তদন্ত হয়নি বলেই পনের আগস্টের পুনরাবৃত্তি ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘটেছে। একই অপশক্তি এখনো সক্রিয়। বারবার শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা করছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তদন্ত কমিশন গঠন করে হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করা হলে হত্যার রাজনীতি বন্ধ হবে। এজন্য কমিশন গঠন জরুরি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের কোনো বিচার করা যাবে না এমন একটি কালো আইন সংবিধানে সংযোজন করা হয়েছিল, যাকে আমরা ইনডেনিমিটি আইন বলি। যার মাধ্যমে সংবিধানকে অপবিত্র করা হয়েছিল। হত্যাকারীদের অবারিত সুযোগ দেয়া হয়েছিল পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য। যেজন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি। এ দেশকে পাকিস্তান বানানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। যে কারণে পরে ইনডেনিমিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বিচারের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। হত্যাকারীদের বিচার করা হয়। তাদের কারো কারো ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। কেউ কেউ এখনো পলাতক রয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার। আমি আশাবাদী, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিশন শিগগিরই গঠিত হবে। ইতোমধ্যে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। তবে এখনো অনেক অনুষঙ্গ. দলিল দস্তাবেজ, সাক্ষী রয়েছে। এসব সমন্বয় করে কমিশন গঠন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।