- ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি
কানাডা ও দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ ইনকরপোরেটেড বা এমটিএফই এর প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। অনলাইন বা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডলার, শেয়ার বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার এই মাধ্যমটি সম্পর্কে প্রতারণার শিকার হওয়া গ্রাহকদের তথ্য জানাতেও বলা হয়েছে।
তবে, ইতিমধ্যেই এমটিএফই-এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এমটিএফই এর সফটওয়ারের ডিজাইন করার সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং বাংলাদেশে অবৈধ অ্যাপসটির মার্কেটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ২০ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তাদের আটক করতে যেকোনো সময় অভিযান পরিচালনা করা হতে পারে। তবে ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা বা অভিযোগ না করলে ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। এজন্যই ভুক্তভোগীদের অভিযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে সিআইডির সাইবার পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সিআইডির সাইবার পুলিশ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) রেজাউল মাসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, রিয়েল মার্কেটের আদলে শেডো মার্কেট বানিয়ে গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে এমটিএফই।
এজন্য গ্রাহকদের অ্যাপসের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয় এবং লেনদেন পরিচালনা করা হয়। প্রলোভন দেখানো হয় ৬ মাসে দ্বিগুন লাভ দেয়ার। গ্রাহকদের টাকা আফ্রিকার স্বর্ণের খনিসহ বিভিন্ন দেশে ইনভেস্ট করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
এক্ষেত্রে প্রমাণ দেখাতে তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট কোন করে প্রতারণা করে গেছে। বাস্তবে তারা কোথাও টাকা ইনভেস্ট করেনি। উল্টো এদেশে সিও ও এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে সভা সেমিনার করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ব্যাপক হারে মানুষের মাঝে অ্যাপসটি ছড়িয়ে দেয়া হয়।
প্রথমদিকে যারা ইনভেস্ট করেছে তারা লভ্যাংশ পেয়ে, লোভে আরো গ্রাহক জোগাড় করেছে। আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় এক লাখ মানুষ এমটিএফই-এর প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। যাদের সিও ও এজেন্ট বলা হচ্ছে তারাও কিন্তু ভুক্তভোগী।
তবে, অতীতে এ ধরনের যে প্রতারণাগুলো হয়েছে, সেগুলোতে বাংলাদেশে বসে ওই চক্রের হয়ে কাজ করা সদস্যও পাওয়া গেছে এবং গ্রেপ্তারও হয়েছে। এক্ষেত্রেও আমরা যাচাই করে দেখতে চাই, কারা ওই চক্রের সদস্য। এজন্য আমাদের ইন্টেলিজেন্স টিম কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার ভুক্তভোগী থাকলেও আশ্চর্যের বিষয় কেউ অভিযোগ দিতে চাইছেন না।
এদিকে সিআইডির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এমটিএফই অনলাইন প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়েছে সিআইডি। ভুক্তভোগীদের তথ্য দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি মাধ্যমও চালু করেছে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্স টিম এ ব্যাপারে নজরদারি করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা প্রতারক চক্রের তথ্য দিয়ে অভিযোগ জানাতে সিআইডি সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সিআইডি বলছে, নিজেদের ছায়া প্ল্যাটফর্মে ট্রেড করার সুযোগ দিয়ে এমটিএফই অ্যাপ সম্প্রতি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে এর কোনও অফিস না থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারিতে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ঘরে বসে সহজে আয়ের পথ বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক-ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চালায় তারা। বিভিন্ন ভিডিও ও বিজ্ঞাপন দেখে ভুক্তভোগীরা আগ্রহী হয়। সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয় একজন আরেকজনকে দেখে। এক্ষেত্রে রেফারেল বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কাজ করে। এমটিএফইও এমএলএম পদ্ধতিতে কাজ করেছে। বেশি লাভের আশায় লাখ লাখ মানুষ অ্যাপসটিতে বিনিয়োগ করেছে। কিছু মানুষ অবশ্য লাভের অংশ পেয়েছে।
তবে চূড়ান্ত বিচারে বিনিয়োগের সব অর্থই খোয়াতে হয় গ্রাহকদের।ঢাকাসহ বরিশাল, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা ও সাতীরায় প্রতারণা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সারা দেশে চার থেকে পাঁচ লাখ গ্রাহক এমটিএফইর মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন।
সিআইডি আরো জানায়, গুগল প্লে স্টোর থেকে যে কেউ এমটিএফই অ্যাপসটি ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারতেন। রেজিস্ট্রেশনের পর তাদের নিজস্ব ওয়ালেটে ট্রেড করার জন্য ডলার রাখতে হতো। ডলারের পরিমাণ অনুযায়ী তাদের প্রতিনিয়ত প্রলোভন দিয়ে লাভের কথা বলা হতো। ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে, এমন কল্পিত মুনাফার কথাও বলা হতো।
রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়েছে গ্রাহকদের। ভার্চুয়ালি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচা করা হলেও লভ্যাংশ দেয়া হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, শুধু এমটিএফই নয়, দেশে এখনো সক্রিয় আছে অনিবন্ধনকৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক এ ধরনের প্রতারক চক্র, যেখানে বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। অ্যাপস ও অনলাইন ভিত্তিক যেকোনো ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতার দরকার।