শেখ হাসিনাকে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার আহ্বান

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:৫৬ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
বিএনপি জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করার অঙ্গীকার করলেন তারা। এজন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনাও দেন তারা।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় এ আহ্বান জানান নেতারা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, সব অপশক্তি আমাদের সামনে ভেঙেচুরে যাবে। আপনারা শুধু সাহস নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াবেন। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ, ছাড়া হবে না। এই দুষ্কৃতকারীদের আমরা ক্ষমা করবো না।
কাদের বলেন, খেলা হবে রূপসা নদীতে, সুন্দরবনে, খুলনায়, ফরিদপুরে, সারা বাংলাদেশে। কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ হয়ে গেছে, এখন সেমিফাইনাল। জানুয়ারিতে ফাইনাল খেলা। প্রস্তুত আছেন?
বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র ও বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়া খুলনা থেকে নির্বাচন করেছিলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর একদিনও খুলনায় আসেননি। উনি অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের সঙ্গে পরামর্শে মোংলা পোর্ট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই পোর্টের ওপর খুলনা-বাগেরহাটের মানুষের আয় নির্ভরশীল ছিল। একদিনে ৩ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যায়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার ছিল ক্ষমতায় আসলে মোংলা পোর্ট চালু করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোংলা পোর্ট চালু করেছেন। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু করে দিয়েছেন। আমরা তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। খুলনার মানুষের সাথে শেখ হাসিনার আত্মার সম্পর্ক।
তিনি বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধ ও ১৫ আগস্টে নিহতদের স্মরণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করার আহবান জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলী সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, সামনের দিনগুলো কঠিন চ্যালেঞ্জের। নির্বাচন হবে কঠিন চ্যালেঞ্জিং। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই, নেতাকর্মীরা সব ঐক্যবদ্ধ আছে। তারা যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় প্রস্তুত। জনগণের ভোটে আপনি পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, দানবের কোন মানবতা থাকে না। বিএনপি-জামায়াত দানব। তারা সৃষ্টি করতে জানেনা ধ্বংস করতে পারে। আগামীতে দানবরা যেন এই বাংলার ক্ষমতায় আসতে না পারে, এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, বিএনপি-জামায়াত অবরোধ দেখেছে। তারা গাড়ি পোড়াচ্ছে। কারি পুড়িয়ে আর মানুষ হত্যা করে তারা নাকি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে, তারা সন্ত্রাসী তারা গণতন্ত্র ও জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক।
এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারছেন। আগামীতেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। উন্নয়নের চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকায় ভোট দিতে হবে। তিনি বলেন, যারা জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করতে চায়, এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করে তুলতে হবে।
সভাপতি মণ্ডলীর আরেক সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, যাদের হাতে বঙ্গবন্ধু হত্যার রক্তে রঞ্জিত। খুলনার মনজুরুল ইমাম, গাজীপুরে আহসান উল্লাহ মাস্টার, হবিগঞ্জে এসএম কিবরিয়া, নাটোরের মমতাজ উদ্দিন, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালুর হত্যাকারী দল বিএনপি। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা খুনি জিয়াউর রহমানের কুপুত্র তারেক আবার রক্ত চায়। এরা নির্বাচন ভণ্ডুল করতে চায়, এদের স্লোগান হচ্ছে টেক ব্যাক বাংলাদেশ। এরা বাংলাদেশকে পিছিয়ে নিতে চায়। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না।
জাতীয় সংসদের চিপ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন বলেন, খুলনা অঞ্চলে এক সময় ছিল ত্রাসের রাজত্ব। এখন শান্তির সুবাতাস বইছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু, অর্থনৈতিক অঞ্চল, মংলা বন্দরসহ অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার সময় এসেছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সেই ঋণ শোধ করব।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ও জামাত উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে শুরু করেছে। তারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চায়। আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে উন্নয়ন ও শান্তির পক্ষে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি জামায়াতের খুনের রাজনীতি আর তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তারা দেশটাকে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য করতে চায়। সেকারণে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান- আসুন টানা পঞ্চম বারের মত শেখ হাসিনাকে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করি।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার মো. আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারীর সঞ্চালনায় বিশাল এ জনসভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সারহান নাসের তন্ময়, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এস এম কামাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মাশরাফি বিন মোর্তজা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, জলবায়ু, বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার,
আরো বক্তব্য দেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি, আমিরুল ইসলাম মিলন, পারভিন জামান কল্পনা, গ্লোরিয়া সরকার ঝর্ণা, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র, সংসদ সদস্য সালাম মুর্শিদী, সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান বাবু, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশিদ, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভূঁইয়া হেমায়েত উদ্দিন, ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিঠু প্রমুখ।
বেলা পৌনে ১১ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পর্ব শুরু হয়। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, ইতিহাস বলে সেই নাম শেখ মুজিবুর রহমান- এই গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বেলা পৌনে বারোটায় পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। এরপর গীতা বাইবেল ও ত্রিপিটক থেকে পাঠ করা হয়। পরে স্থানীয় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য শুরু করেন।
বিকেল ৩ টা ১৯ মিনিটে জনসভা মঞ্চে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই তিনি ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পাঁচটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন।