দক্ষতা ও ক্লিন ইমেজে নৌকার কাণ্ডারি তাপস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:৩৮ এএম
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দক্ষিণে দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হলেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। তার বদলে নৌকার হাল তুলে দেয়া হয়েছে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের হাতে। উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম বহাল থাকলেও দক্ষিণে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনকে চমক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বর্তমান মেয়রের সীমাহীন ব্যর্থতা ও ইমেজ সংকটের কারণেই প্রার্থী পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ঢাকা-১০ আসনের ৩ বারের সফল সংসদ সদস্য ছাড়াও একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস জনপ্রিয়, দক্ষ এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী। সবদিক বিবেচনা করে বিজয় অব্যাহত রাখতে দল তাকে মনোনয়ন দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, সাঈদ খোকন নিজের কপাল নিজেই পুড়েছেন। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারায় ক্ষুব্ধ হাইকমান্ড। অন্যদিকে অতিকথনসহ নানা কারণে ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে সাঈদ খোকনের। তার বিভিন্ন সময়ের বিতর্কিত মন্তব্যে বিব্রত হতে হয়েছে সরকারকেও। এ ছাড়া দলীয় মনোনয়নে নির্বাচিত মেয়রের দায়িত্ব শুধু দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করা নয়; বরং দলকে সংগঠিত করাও তার
একটি বড় কাজ। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরকে সংগঠিত করা। কিন্তু অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন এখানেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। বরং তিনি নিজেই নানারকম গ্রæপিং ও উপদলীয় কোন্দলে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। সবমিলিয়ে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে গেছেন ব্যারিস্টার তাপস।
অব্যশ প্রার্থী ঠিক করতে কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। কোন প্রার্থী নির্বাচনে জেতার উপযোগী, সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। মনোনয়ন বোর্ডে যারা ছিলেন, তারা প্রার্থীর জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন। প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতার দিক বিবেচনায় নিয়েছেন। মনোনয়ন বোর্ডের সবার সম্মতিতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন।
দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে : বিশ্লেষকদের মতে, মেয়র মনোনয়নের ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নতুন মেয়র প্রার্থী কেমন হলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ ভোরের কাগজকে বলেন, দল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তরুণ আইনজীবী ও সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি জনপ্রিয় এবং দক্ষ। দল তাকে মনোনয়ন দিয়ে ভালো করেছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত ভোটাররা দেবেন।
সাঈদ খোকনের ব্যর্থতার কারণেই শেখ ফজলে নূর তাপস নৌকার টিকেট পেয়েছেন মন্তব্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, ইশতেহার বাস্তবায়নে দক্ষ নেতৃত্ব দেখাতে পারেননি। যেমনটি স্বল্প সময়ে আনিসুল হক করে দেখিয়েছেন।
খোকনের সমর্থন চান তাপস : এদিকে গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডিতে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলন শেষে একই জায়গায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ২ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দলীয় ঐক্য, বর্তমান মেয়র মো. সাঈদ খোকনের সমর্থন চেয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমি আশা করি, আওয়ামী লীগের সকল অঙ্গসংগঠন এবং আওয়ামী লীগের সবাই আমার জন্য কাজ করে যাবেন। তাপস বলেন, শেখ হাসিনা উন্নত বাংলাদেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। আমাদের রূপকল্প দিয়েছেন একটি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের। সেই উন্নত বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত রাজধানী প্রয়োজন।
সেই উন্নত রাজধানী গড়ার লক্ষ্যে এই সুযোগটা আমি নিয়েছি, জনগণের কাছে যাব। ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে স্বমহিমায় প্রস্ফ‚টিত করার লক্ষ্যে এবং পুরান ঢাকার অধিবাসীদের দীর্ঘদিনের অবহেলা ঘুচিয়ে তাদের একটি উন্নত রাজধানী, যেখানে সকল নাগরিকের সুযোগ সুবিধা থাকবে সেজন্য ৩০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করব। তিনি বলেন, প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক আমাদের অনুপ্রেরণা। আনিসুল হকের কাজ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তাপস বলেন, তিনি অল্প সময়ে প্রমাণ করেছিলেন- সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে মানুষের দরজায় কীভাবে পৌঁছানো সম্ভব, সেটাকে পুঁজি করে আমি কাজ করতে চাই।
তিলোত্তমা ঢাকা গড়ার প্রত্যয় আতিকের : আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনাসহ মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি ভোটারদের সহযোগিতা চেয়েছেন মেয়র পদে ফের মনোনয়ন পাওয়া আতিকুল ইসলাম। ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচন করে নয় মাসে যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি। আপনারা জানেন, যে দিন থেকে দায়িত্ব পেয়েছি সেদিন থেকে একটি দিনও সময় নষ্ট করিনি। আমরা জানি আমাদের কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। আসুন আমরা সবাই মিলে একটা সুন্দর ঢাকা শহর গড়ে তুলি।