অবিনাশী মহামানবের জন্মদিন আজ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২০, ১২:০৮ এএম
বিশ্বরাজনীতিতে তিনি ছিলেন ধ্রুবতারা। রাজনীতির অনন্য অসাধারণ মহাকবি। সভ্যতার ইতিহাসে এমন উপমা শুধু একজনের জন্যই। তিনি হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হিমালয়সম উচ্চতার বাঙালির এই প্রাণপুরুষের শততম জন্মদিন আজ। আজ বাঙালি জাতির বাতিঘর স্থাপন আর ধ্রুবতারা উদয়ের দিন।
গত কয়েক দশকে এশিয়ায় অনেক নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর উচ্চতা ছুঁইতে পারেননি তাদের কেউই। মহাত্মা গান্ধী, জর্জ ওয়াশিংটন, মাওসেতুং, হো-চি মিন, ফিদেল কাস্ট্রো, নেলসন ম্যান্ডেলা, লেনিন কিংবা মার্শাল টিটোর কাতারে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসামান্য সফল নেতা।
বাঙলার স্বপ্ন-দর্শন-সমৃদ্ধির এই মহামানব শুধু বাঙালির বঙ্গবন্ধুই নন, ’বিশ্ববন্ধু’ উপাধিতেও বিশ্বনন্দিত। শুধু বাঙালিই নয়, গোটা বিশ্বের নিপীড়ত, শোষিত আর নির্যাতিত মানুষের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার এক মহাপুরুষ তিনি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলতে গেলে কবিতার সৌন্দর্যেই তাকে বর্ণনা করতে হয়। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়-
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর পতাকার মতো
দুলতে থাকে স্বাধীনতা,
ধন্য সেই পুরুষ, যাঁর নামের ওপর ঝরে
মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি।
বঙ্গবন্ধু যে বিশ্বরাজনীতির অনন্য উচ্চতার শিখরে ছিলেন তার বয়ান করে গেছেন তার সমউচ্চতার বিশ্বনেতারাই। বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম মানব হিসেবে দেখেছিলেন কিউবান রাজনৈতিক নেতা ও সমাজতন্ত্রী বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রো। বলেছিলেন, আমি হিমালয় দেখিনি, তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তি ও সাহসে এ মানুষটি হিমালয়ের সমতুল্য।
‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ এর লেখক মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ তাঁর বিখ্যাত ‘অনডিউটি ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে হিমালয় মানবকে মূল্যায়ন করে বলেছিলেন, এমন একজন মানুষের আবির্ভাব ঘটেছে যে অনগ্রসর বাঙালি জাতিকে মুক্তির আস্বাদ দিবে। তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেছেন, আপোষহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম শহীদ। তাই তিনি অমর।
ভারতের ইতিহাসে একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব একজন মহান নেতা ছিলেন। তার অনন্যসাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।’
বঙ্গবন্ধুকে মহাত্মা গান্ধীর উচ্চতায় নিয়ে ফ্রান্সের বিখ্যাত সাহিত্যিক আঁদ্রে মালরো বলেছিলেন, ‘স্টালিন নয়, হিটলার নয়, মাও সেতুং নয় মাহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানকে যদি জগৎ এখনও না বুঝে থাকে, না বুঝে থাকে তাদের মতের মর্মবাণী, তবে সময় এসেছে এ বিষয়ে দৃষ্টি উন্মোচনের।
ব্রিটিশ মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা প্রয়াত লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে আরেকধাপ এগিয়ে বলেছেন, জর্জ ওয়াশিংটন, মহাত্মা গান্ধী, ডি ভ্যালেরারও চেয়েও শেখ মুজিব এক অর্থে বড় নেতা। শেখ মুজিবের সাহসিকতা ও ব্যক্তিত্ব কেবল দক্ষিণ এশিয়া নয় সারাবিশ্বে বিরল।
মুক্তিযুদ্ধের পরই ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার শক্তি কোথায়?’ বঙ্গবন্ধু অকপটে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।’ ফ্রস্ট আবরো প্রশ্ন করেছিলেন, আপনার দুর্বল দিকটা কি?’ বঙ্গবন্ধু জবাবে আবারো বলেছিলেন, ‘আমি আমার জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি।’
পশ্চিম জার্মানির পত্রিকা শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুই ইয়ের সঙ্গে তুলনা করে লিখেছিল, জনগণ তার কাছে এতো প্রিয় ছিল যে লুই ইয়ের মতো তিনি এ দাবি করতেই পারেন আমি-ই রাষ্ট্র। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বঙ্গবন্ধুকে বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছিল। আর ফিনান্সিয়াল টাইমস লিখেছিল, মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিত না।
বিশ্বরাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু একটি মহাকাব্যের নাম। বাংলাদেশের অমর স্বাধীনতা মহাকাব্যের মহাকবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাঙালির অন্তকালের প্রেরণার উৎস। ইতিহাসের জঘন্য ঘাতকরা তাকে প্রাণে মেরে বিনাশ করতে চাইলেও তারা ব্যর্থ। তিনি অবিনাশী, অমর, অজর, অক্ষয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, পৃথিবী থাকবে, রাজনীতি থাকবে, ততোদিনই বাঙালি জাতির এই প্রাণপুরুষ বেঁচে থাকবেন বাঙলার মাটি আর মানুষের মধ্যে।
অন্নদাশঙ্কর রায় এর ভাষায়-
যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।