কোনোভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২০, ০১:৩৩ পিএম

শত চেষ্টার পরেও পণ্য পরিবহনের ট্রাক ও রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী পরিবহন ঠেকানো যাচ্ছে না। দিনে এবং রাতের বিভিন্ন সময় মিনি ট্রাক, পিকআপভ্যান এবং রোগী বহনের কথা বলে চড়া ভাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সগুলো যাত্রী পরিবহন করছে। পুলিশ প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থার পরেও এসব যানবাহনের চলাচল রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সাধারণ মানুষ যেমন সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করছে না, তেমনই যাত্রী পরিবহনের অনুমোদন না থাকা অনেক যানবাহনও সরকারের বিধি বিধিনিষেধ মানছে না। গত ২৬ মার্চ থেকে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর পণ্যবাহী ও রোগীবাহী যানবাহনগুলোই গণপরিবহনে পরিণত হয়। এসব পরিবহনের চালকরা সহজে অর্থ উপার্জনের জন্য যাত্রী পরিবহন শুরু করে। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের আহ্বানে তারা সাড়া দিচ্ছে না।
দুই দফায় সরকারের ছুটি ঘোষণার মধ্যে গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও পণ্য ও রোগী পরিবহনগুলো যাত্রী পরিবহন করে সামাজিক দূরত্ব মানার সমস্ত উদ্যোগ ভেস্তে দেয়। ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে এবং বসিয়ে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে পন্যবাহী ট্রাক ও পিকআপভ্যানগুলো যাত্রী পরিবহন করে। ঠাসাঠাসি করে যাত্রীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণের বিস্তার ঘটায়। এই অবস্থা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সোমবারও রাজধানীর আমিনবাজারে পিকআপভ্যানে যাত্রী পরিবহনের দৃশ্য চোখে পড়েছে। গভীর রাতে পুলিশের শিথিলতার সুযোগেও যাত্রী নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে।
এ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল আইজি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করব। কাউকে নির্দেশনা লঙ্ঘন করতে দেব না। গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরেও অনেকে অন্য পরিবহনে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা মহাসড়কে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে ৪০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছি। চলাচলের অনুমোদন রয়েছে এমন সব যানবাহনকে আমরা নির্বিঘ্নে চলাচলে সহযোগিতা করছি।
তিনি আরো বলেন, বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে চলাচলের সময় গত রবিবার কয়েকশ যানবাহন আটক করা হয়েছে। উত্তরবঙ্গের হাটিকুমরুল এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ১২৫টি এবং গাজীপুরের চন্দ্রায় ১২৫টি যানবাহন আটক করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকাতেও হাইওয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে কাজ করছে।
গাজীপুর পুলিশ সূত্র জানায়, গাজীপুরের চন্দ্রাসহ বিভিন্ন সড়কে হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। গত রবিবার গাজীপুর থেকে পুলিশ ১৯১টি যানবাহন আটক করেছে। আটককৃত যানবাহনের মধ্যে একাধিক অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানিয়েছে, যাত্রীবাহী পরিবহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে সব জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী আইন অমান্যকারীদের এক মাসের কারাদণ্ড অথবা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজি আবুল কালাম জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা সব মালিক-শ্রমিককে জানিয়ে দিয়েছি। তারপরেও যারা পণ্য পরিবহনের যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করছে তারা অন্যায় করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন না করার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরেও কেউ কেউ এই কাজ করছে, এদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। নব্বই ভাগ শ্রমিক চরম অসহায় অবস্থায় রয়েছে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবারের জোগান দিতেই রাস্তায় নেমেছে বলে আমি মনে করি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সেক্টরে নানান ধরনের প্রণোদনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবহন সেক্টরে কোনো প্রণোদনা দেয়া হয়নি। পরিবহন সেক্টরেও সরকারের প্রণোদনা দেয়া উচিত।