নির্বাচন পরবর্তী অবস্থা জানতে চাইলেন লু

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৮:২২ এএম

ডোনাল্ড লু
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সমসাময়িক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় তিনি এ বৈঠক করেন। দুদিনের সফরে এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় আসেন লু। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম।
সফরের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার তিনি প্রথমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে ও পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গুলশানে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বাসায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শ্রমিক নেতা ও জলবায়ুকর্মীরা ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক অ্যাক্টিভিস্ট সোহানুর রহমান ও মানবাধিকারকর্মী নুর খান লিটন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইউএসএআইডির কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সোহানুর রহমান বৈঠক শেষে জানান, ডোনাল্ড লুর সঙ্গে নাগরিক সমাজের আলোচনায় স্থান পেয়েছে জলবায়ু অভিযোজন। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের সুরক্ষার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচনপরবর্তী গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শ্রমনীতির অগ্রগতি, জলবায়ু সংকটসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে।
এছাড়া গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, বৈঠকে গণমাধ্যম যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন লু। তবে দেশের গণমাধ্যমের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত থাকা ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম এ বিষয়ে বৈঠক শেষে কোনো মন্তব্য করেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মার্কিন ভিসানীতিসহ অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রায়ই নাক গলিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের আগে ডোনাল্ড লুর সফর আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। এবারো তার সফরের আগে প্রশ্ন ওঠে- লু কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন কি না। কিন্তু সফরসূচি অনুযায়ী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার বৈঠকের কোনো কর্মসূচি নেই। এরপরও তার এই সফরকে ঘিরে রাজনৈতিক আলোচনা চলছে গত কয়েকদিন ধরেই।
এমনকি পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিচ্ছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তবে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেলের কাছে গত ১৭ মাসের মধ্যে তৃতীয়বার তার এই সফরে তিনি রাজনৈতিক দল কিংবা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না- তা জানতে চাওয়া হয়।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইস্যুতে বারবার কথা বলা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নও রাখা হয়। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ব্যস্ততার কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবেন না ডোনাল্ড লু। ১৫ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তার এই সফরে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারসহ মুক্ত, অবাধ ও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বাস্তবায়ন গুরুত্ব পাবে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকা সফরকালে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা তোলা হবে। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন, নাগরিক অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাবে। এছাড়াও সফরকালে ডোনাল্ড লু ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করবেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন সরকারের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন তিনি। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের (আইপিএস) মাধ্যমে সমুদ্রে চীনের আধিপত্য ঠেকানোর বার্তাও দিতে পারেন লু।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও বলেছেন, ডোনাল্ড লুর সফরে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি এবং র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা করব। এর আগে যখন যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা সফরে এসেছিলেন, তখনই আমরা এসব সহজীকরণ বা তুলে নেয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এবারো এসব ব্যাপারে আলোচনা হবে।
ডোনাল্ড লু বললেন, বাংলাদেশের ফুচকা বেস্ট : ঢাকা সফরে ডোনাল্ড লু বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। সফরের প্রথম দিনে গতকাল বাংলাদেশি ফুচকা ও ঝালমুড়ির স্বাদ নিয়েছেন। ফুচকা খেয়ে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ফুচকা ইজ দ্য বেস্ট।’ গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুকে ২২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ডোনাল্ড লু ফুচকা ও ঝালমুড়ির স্বাদ নিচ্ছেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসও উপস্থিত ছিলেন। সেলিব্রেটি শেফ রহিমা সুলতানার ফুচকা ও ঝালমুড়ির স্বাদ নিয়েছেন তারা। এ সময় ডোনাল্ড লু ও রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সমবেত কণ্ঠে বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুচকা ইজ দ্য বেস্ট।