বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক শ্রেণিতে রয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বের ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম। বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্কোর ১২। গত এক দশকে এই স্কোর কমেছে ১০ পয়েন্ট।
আর্টিকেল নাইনটিনের 'বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিবেদন-২০২৩'-এ এই চিত্র উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়।
২০১৭ সাল থেকে আর্টিকেল নাইনটিন ‘বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে। এবারের প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে একযোগে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো এই প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য আর্টিকেল নাইনটিনের পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করেন আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।
সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের মতো সংকটজনক অবস্থায় আছে ভারত ও আফগানিস্তান। এবার বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্কোর ১২। ২০১৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর আটকে আছে ১১ ও ১২-এর মধ্যে। দশ বছরে বাংলাদেশের স্কোর কমেছে ৮ পয়েন্ট, ২ যুগে কমেছে ৩২ পয়েন্ট। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৪৪।
আরো পড়ুন: ঢাকায় পৌঁছেছেন অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সবার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ, যোগাযোগ এবং অংশগ্রহণসহ ২৫টি সূচকের বিপরীতে মতপ্রকাশ বা এক্সপ্রেশন স্কোর নির্ধারণ করে সংস্থাটি। স্কোর অনুযায়ী ০-১৯ সংকটজনক, ২০-৩৯ অতিবাধাগ্রস্ত, ৪০-৫৯ বাধাগ্রস্ত, ৬০-৭৯ স্বল্প বাধাগ্রস্ত ও ৮০-১০০ মুক্ত। আর্টিকেল নাইনটিনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২৪টি দেশ অতি বাধাগ্রস্ত, বাধাগ্রস্ত ২৫টি, স্বল্প বাধাগ্রস্ত ৩৫টি ও মতপ্রকাশের মুক্ত শ্রেণিতে রয়েছে ৩৮টি দেশ।
১৬১টি দেশের ২৫টি সূচক ব্যবহার করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পরিমাপ করা হয়। এসব সূচককে ৬টি বড় ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। সূচকগুলোর বিপরীতে ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত মতপ্রকাশ স্কোর নির্ধারণ করা হয়। স্কোরের ভিত্তিতে সংকটজনক, অতি বাধাগ্রস্ত, বাধাগ্রস্ত, স্বল্প বাধাগ্রস্ত ও মুক্ত এই পাঁচটি শ্রেণিতে দেশগুলোকে ভাগ করা হয়।
বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫টি সূচকের মধ্যে সবগুলো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্কোর সম্পূর্ণ ঋণাত্মক। ২০০৯ সাল থেকে ৮টি সূচকেই ক্রমাগত খারাপ করে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেন্সরশিপে। ধর্ম পালন ও নারী পুরুষের আলোচনার স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ইতিবাচক। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সমাবেশ করার স্বাধীনতা ও একাডেমিক-সাংস্কৃতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্কোরে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের জন্য ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। সমালোচনা গ্রহণ করার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। ক্ষমতার রাজনীতির হাতে মতপ্রকাশ জিম্মি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নজরদারি ও সভা-সমাবেশ করার অধিকারের দিক থেকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে নাগরিক সমাজের জন্য ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। আইন করা হচ্ছে নিবর্তনমূলক, ব্যক্তির পরিচয় ভেদে ভালো আইনের অপপ্রয়োগ হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, স্কোর থেকে ভয়াবহতা বোঝা যায় না। সরকারের মনস্তত্ত্ব হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা। সরকার গণতান্ত্রিক হলে বিরুদ্ধমত কতদূর যাবে সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও চর্চা যতক্ষণ একটা ন্যূনতম পর্যায়ে না গেলে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত পর্যায় থেকে উত্তরণ হবে না।
রাষ্ট্র জনগণকে ভয় পেলে সেটি বিপজ্জনক। সরকার জনগণকে ভয় পেলে নানাভাবে আইন দিয়ে মোকাবিলা করার চেষ্টা করে। সাইবার নিরাপত্তা আইন হয়েছে, কিছুটা নমনীয় কিন্তু ভয়ের সংস্কৃতি রয়ে গেছে। যতদিন এই ভয়ের সংস্কৃতি থাকবে ততদিন মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় অবনতি থাকবে।