যুগান্তর অনলাইন ইনচার্জের বাবার ওপর হামলার ঘটনায় মামলা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৪, ০৮:৫৬ পিএম

দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন বিভাগের ইনচার্জ আতাউর রহমানের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বর
দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন বিভাগের ইনচার্জ আতাউর রহমানের বাবা জাহাঙ্গীর হোসেন মাতব্বরের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
গত শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় পূবাইল মেট্রো থানায় এ মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবার। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তদের আসামি করা হয়েছে। বাদী হয়েছেন ভুক্তভোগীর ছেলে আতাউর রহমান।
গত ৮ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মহানগরীর পূবাইল থানাধীন ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দরাবাদের মুজিবুর মার্কেট থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। পথিমধ্যে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা পথরোধ করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে তার আর্তচিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে হামলাকারী দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহতাবস্থায় জাহাঙ্গীর হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে পাশের ডাক্তারবাড়ি হেলথকেয়ার এবং পরে রাজধানীর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই হাসপাতালে জাহাঙ্গীর হোসেনের কয়েকটি জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়।
আরো পড়ুন: আরটিভি-এসএমসি মনিমিক্স প্রেরণা পদক পেলেন পলাশ মাহবুব
ওই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আঘাতগুলো এতো গভীরে গেছে এবং এতো রক্তপাত হয়েছে যে, জাহাঙ্গীর হোসেনের জীবনশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। আঘাতে তার ডান পায়ের হাড় ভেঙে গেছে, পেটের গভীর পর্যন্ত ক্ষত হয়েছে, চোয়াল ভেঙে গেছে, দুটি দাঁত উপড়ে গেছে। শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। টানা সাড়ে ৮ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর তাকে দুদিন লাইফসাপোর্টে রাখা হয়।
এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পূবাইল থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) গাজীপুরের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর হোসেন মাতবর দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। এলাকায় বিচার-সালিশের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন। অন্যায়, সন্ত্রাস ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার থাকেন। এ কারণে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা করে থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। হামলাকারীদের কিছু আলামত পুলিশ ও পিবিআইয়ের হাতে রয়েছে বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে মামলার বাদী বলেন, হামলার শিকার হয়ে বাবা মৃত্যুশয্যায় এতোদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাবাকে ফিরে পাওয়াই আমাদের প্রধান চাওয়া ছিল। বাবাকে বাসায় নেয়ার পর আইনি প্রক্রিয়ায় এগিয়েছি। আমার বাবার ওপর যে বা যারা হত্যার উদ্দেশে হামলা করেছে তাদের গ্রেপ্তার ও সঠিক বিচার চাই। আমরা আশা করব- পুলিশ, ডিবি, পিবিআই, র্যাবসহ আইনশৃংখলা বাহিনী আন্তরিক হয়ে নৃশংস এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরো বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করা কঠিন কিছু নয়। কিছু আলামত পুলিশ, ডিবি ও পিবিআইর কাছেও রয়েছে। রাষ্ট্রের আইনশৃংখলা বাহিনীর ওপর আমাদের পরিবারের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। আমাদের বিশ্বাস এ ঘটনার সঠিক বিচার আমরা পাবই।
আরো পড়ুন: প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
এ বিষয়ে পূবাইল থানার ওসি কামরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন মাতবরের ওপর হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, আসামিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস।
গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) পুলিশ সুপার মাকছুদুর রহমান জানান, আমরা ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করছি। আশা করি একটা পজেটিভ রেজাল্ট শিগগিরই বেরিয়ে আসবে।
যুগান্তর অনলাইন ইনচার্জ আতাউর রহমানের বাবাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা হয়েছে, আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, স্থানীয়রাও বলছেন- এটি নিছক কোনো ডাকাতির উদ্দেশে হামলা নয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার উদ্দেশে ভাড়াটে কাউকে দিয়ে হামলা করা হয়েছে, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় আপনাদের নিজস্ব তদন্তের কোনো অগ্রগতি আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, বিষয়টি আমরা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি এবং আমার অফিসাররা এটি নিয়ে কাজ করছেন। খুব দ্রুতই একটি ভালো রেজাল্ট পাওয়া যাবে।