মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিকদের ভিউ নির্ভরতা পরিহার করতে হবে

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ডিজিটাল সাংবাদিকদের ভিউ নির্ভর সাংবাদিকতা পরিহার করে সাংবাদিকতার নৈতিকতা ধারণ করতে হবে। মানসম্পন্ন সাংবাদিকতার উপর জোর দিতে হবে। সেই সঙ্গে দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াতে হবে।
শনিবার (১ জুন) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল মিডিয়া এক্সিলেন্সি অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তরা। ডিজিটাল মিডিয়া ফোরাম আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস।
পিআইবির মহাপরিচালক কবি জাফর ওয়াজেদ বলেন, করোনার সময়ে ডিজিটাল জগতে অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে দিলো, পত্রিকার মাধ্যমে করোনা ছড়ায়। ফলে বাসাবাড়িতে পত্রিকা রাখা বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে বাড়িতে পত্রিকা রাখা বন্ধ হয়ে গেলো। সেই পত্রিকার উপর একটি ধ্বস নামলো। পাঠক পত্রিকা বিমুখ হয়ে গেলো। তারপর পাঠক অনলাইন মুখী হলো। দৈনিক পত্রিকাগুলোর অনলাইন পাঠক বেড়ে গেলো।
এর ফলে জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা ও দক্ষতা কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যার যেটা দরকার অনলাইনে সেটাই পড়ে। অন্যদিকে এখন পত্রিকা ও অনলাইনে অনেক প্রবন্ধ ছাপা হয়। কলাম ছাপা হয়। আগে পত্রিকার কলাম লিখতো পত্রিকার স্টাফরা। এখন কলাম লিখে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তাদের একাধিক কলাম ছাপা হয়। এখন কলামিস্ট বলতে উপাচার্যকে বুঝি। তার উপাচার্যের পদ থেকে সরে গেলে তার আর কলাম দেখি না। সে গুলো না হয় কলাম, না হয় প্রবন্ধ, না হয় একাডেমিক লেখা। লেখার মধ্যেও কারিশমা থাকে না। ফলে আগামীতে পত্রিকার উপসম্পাদকীয় লেখার মতো লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আরো পড়ুন: ছায়ানটে মধুবন্তীর রবীন্দ্রসংগীতের মুগ্ধতাময় এক সন্ধ্যা
সাংবাদিকদের যোগ্যতা নির্ধারণ বিষয়ে চলমান বির্তকের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫০, ৬০, ৭০ দশকে রাজনৈতিক কর্মীরাই সাংবাদিকতায় আসতেন। তাদের আইকিউ দক্ষতা ভালো ছিলো। পড়াশোনার অভ্যাস ছিলো। জ্ঞান অর্জন করতো। অধিকাংশ সাংবাদিক অনেক কিছু বুঝে না। কিন্তু এখন যারা সাংবাদিকতা করছেন তারা ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা রাখে না।
তিনি আরো বলেন, তথ্য প্রযুক্তির যুগে অনেককিছু পরিবর্তন হবে। সাংবাদিকতায়ও এই পরিবর্তনের ঢেউ লাগছে। তা মেনে নিতে হবে। ডিজিটাল করতে হবে। তবে নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতার নৈতিকতা রক্ষা করেই এগুতো হবে। পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। মন যেনো ছোট না হয়, সেদিকেই তরুণদের নজর দিতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্পাদক ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে অন্তত চারটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে। পূজা মণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে ফেইসবুকে লাইভ করে, সারা দেশে মন্দির ভেঙ্গেছে। ডিজিটাল মিডিয়ার কারণেও বিভিন্ন অপতথ্য ছড়ানো হয়। গুজব রটানো হয়।
তরুণ সাংবাদিকদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সাংবাদিকতা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল সাংবাদিকতা ভিউ নির্ভর হয়ে গেছে। এর উপর নির্ভর করে সাংবাদিকতা দাড়িয়ে গেলে দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতা বাড়বে। তাই ডিজিটাল সাংবাদিকতা এথিকাল জার্নালিজম (সাংবাদিকতার নৈতিকতা) ও কোয়ালিটি জার্নালিজম (মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা) দুইটির উপর জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে নিজের দেশ, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে।