ঘূর্ণিঝড় রেমালে কৃষিতে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকার ক্ষতি

হরলাল রায় সাগর
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪, ১১:০৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ঘূর্ণিঝড় রেমালে দেশের ৫০ জেলায় প্রায় ৬২ হাজার আটশো হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার ৫৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি কৃষক।
এদিকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ২১ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। তাদের মাছে প্রায় দেড় কোটি টাকার বীজ ও সার বিতরণ করা হচ্ছে। পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার গত সপ্তাহে উপকূলসহ দেশের উপর দিয়ে দীর্ঘ স্থায়ী প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল বয়ে যায়। জলোচ্ছ্বাসে ও ভারী বৃষ্টিপাতে পানিতে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ জনপদ। লবণ পানি ঢোকা ও জলাবদ্ধতার কারণে ১৪টি কৃষি অঞ্চলের ৫০টি জেলার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রায় ১ লাখ ৭১ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ে আউশ বীজতলা, আউশ আবাদ, বোরো, বোনা আমন, গ্রীষ্মকালীন সবজি, পাট, ভোট্ট্রা, তিল, মুগ, আদা, হলুদ, মরিচ, চিনাবাদাম, আম, লিচু, পেঁপে, কলা, পেয়ারা, পান, আখ ও তরমুজ ফসলের ক্ষতি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হচ্ছে, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুড়া, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, ফরিদপুর, মাদারিপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।
সংস্থাটি ফসলের ক্ষতির একটি হিসাব তৈরি করেছে। তাতে দেখা গেছে, ৬২ হাজার সাতশ ৮৩ দশমিক ৮২ হেক্টর-জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এ আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার ৫৯ কোটি ৫০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার দুইশ ৩৪ জন।
অন্যদিকে রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাৎক্ষণিকভাবে ১৫ জেলার ২১ হাজার ৫৫ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। এতে বরাদ্দ করা হয়েছে এক কোটি ৪৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। প্রত্যেক কৃষককে বিনামূল্যে ৫ কেজি উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের রোপা আমনের বীজ এবং ১০ কেজি করে ডিএপি ও এমওপি সার দেয়া হবে। এসব উপকরণ শিগগিরই সংশ্লিষ্টদের মাঝে শিগগিরই বিতরণ করা হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এসব উপকরণ বিতরণের জন্য কৃষিমন্ত্রীর পটুয়াখালীতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ বাদল চন্দ্র বিশ্বাস মঙ্গলবার (৪ জুন) ভোরের কাগজকে বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ে যে টাকা ছিলো তা বরাদ্দ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অল্প কিছু কৃষককে তাৎক্ষণিকভাবে পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তুলনায় এ টাকা খুবই কম। তবে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় আনার জন্য ৪৩ কোটি টাকা চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমিন উইং) কৃষিবিদ তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী ভোরের কাগজকে বলেন, এ সময়ে মাঠে তেমন ফসল ছিলো না। এখন ক্ষেতে কেবল আউশ ধানের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। আর সামান্য গ্রীষ্মকালীন সবজি ছিলো। তাই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতি কম হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের আওতায় আনতে পারলে অনেকটাই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।