×

জাতীয়

করোনার ভ্যাকসিন প্রাপ্তির আশা ক্ষীণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২০, ০৯:৪০ এএম

   

গ্যাভির ওপরই ভরসা প্রশ্নবিদ্ধ গ্লোবের দাবি

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন (টিকা) পাওয়ার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর মাঝে চলছে প্রতিযোগিতা। মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে তারা। এই অসম প্রতিযোগিতা নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের সব মানুষের ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হলেও বাংলাদেশ কখন তা পাবে, এ নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরু থেকেই ছিল অনিশ্চয়তা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে এবং এখনো বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ সবার আগে ভ্যাকসিন পাবে। সবার আগে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য।

ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পথে অনেকটাই আশা জাগিয়েছিল বাংলাদেশে চীনা প্রতিষ্ঠানের সিনোভ্যাক বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের বিষয়টি। নতুন জটিলতায় সেই আশাও এখন ক্ষীণ। বাংলাদেশে এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আগে পুরো অর্থ সিনোভ্যাক দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখন নিজেদের ‘সংকটের’ কথা জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অর্থ-সহায়তা চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে আগামীকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সভায় আলোচনা হবে। এর আগে গত ১৮ জুলাই আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (আইসিডিডিআরবি) এই টিকা বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ভ্যাকসিন উদ্ভাবক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো শুরুতে বিভিন্ন দেশের ৩ শতাংশ মানুষকে টিকা সরবরাহ করা এবং ২০২১ সালের মার্চে তারা ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কাজ করছে। এই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। এদিকে আগস্টের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন (টিকা) জোট গ্যাভি, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ও ভারতের টিকা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও নোভাভ্যাক্সের করোনার ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার পর সেগুলোর ১০ কোটি ডোজ তৈরি করে বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের একশটিরও বেশি দেশে সরবরাহ করা হবে।

এদিকে মেডিকেল জার্নাল বায়োআর্কাইভ বলছে, গ্লোব বায়োটেকের তৈরি ‘ব্যানকোভিড’ (ডি৬১৪জি ভ্যারিয়েনটস এমআরএনএ ভিত্তিক) ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়েবসাইটের তথ্য সত্যতা যাচাই অংশে বায়োআর্কাইভ বলছে, এটি কোনো জার্নাল নয়। ‘পিআর রিভিউ’ (উচ্চপর্যায়ের স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার গবেষণাভিত্তিক অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতে চালানো পর্যালোচনা) ছাড়াই প্রকাশিত হয়। বায়োআর্কাইভটি তাদের সাইটে প্রকাশিত কোনো আর্টিকেলকে কোনো কাজের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ধরে নেয়াও সঠিক নয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক বাংলাদেশ ফার্মাকোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ধনী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। সেই সঙ্গে চলছে টাকার খেলা। ভ্যাকসিন পেতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে ধনী দেশগুলো, যা সমভাবে ভ্যাকসিন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত অর্থ খরচ করে আমাদের মতো দেশের পক্ষে সবার জন্য ভ্যাকসিন কেনা সম্ভব নয়। গ্যাভির ভ্যাকসিনই আমাদের ভরসা। তবে এটিও যথেষ্ট হবে না। কারণ একসঙ্গে ৬০/৭০ শতাংশ মানুষের মধ্যে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা সম্ভব না হলে তা কার্যকর হবে না।

চীনা কোম্পানির ভ্যাকসিন প্রয়োগে অনিশ্চয়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চীনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হলে আমাদের জন্য এটি একটি সুযোগ হতো। এর ফলে বাংলাদেশের স্থানীয় কোম্পানিকে তাদের ভ্যাকসিনের মেধাস্বত্ব দিত। এতে আমাদের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির পথ অনেকটাই সুগম হতো। আশা করি, সরকার পর্যায়ে লোকজন বিষয়টি সুরাহা করবেন।

গ্লোবের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্লোবের ভ্যাকসিন করোনা প্রতিরোধে সক্ষম এটি এখনই দাবি করা বোধ হয় সঠিক না। কারণ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ৩টি পর্যায়ে ৩টি বিষয় দেখা হয়। প্রথমত নিরাপত্তা, দ্বিতীয়ত কার্যকারিতা ও মাত্রা (কত ডোজ প্রয়োজন হবে) এবং তৃতীয়ত যা খুবই জরুরি সেটি হলো সুরক্ষা। এই ৩ ধাপে সফলতা না পেলে কোনো কার্যকর ভ্যাকসিন আসবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত কমিটির এক সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, সিনোভ্যাক তাদের দেয়া চিঠিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য তাদের অর্থ বরাদ্দ ছিল। যেহেতু বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছে এবং অন্যান্য দেশে এই কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়ে গেছে তাই তারা আর্থিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। সিনোভ্যাকের এমন বক্তব্য কিন্তু চুক্তিবহির্ভূত। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রস্তুতির অনেকখানিই এগিয়ে ছিল। এখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। মনে হয়, পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা ওই কোম্পানি পূরণ করে ফেলেছে। এজন্যই বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে।

গ্লোবের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বায়োআর্কাইভে প্রকাশিত হওয়ার কারণে গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার সুযোগ একেবারেই নেই। এটি নিতান্তই একটি প্রাথমিক ধাপমাত্র। করোনা ভ্যাকসিনের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটির এমন প্রচারণা সত্যিই বিস্ময়কর।

ভ্যাকসিন গবেষণায় নিজ প্রতিষ্ঠানের সাফল্য দাবি কতটা যৌক্তিক এ প্রসঙ্গে গ্লোব বায়োটেকের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ ভোরের কাগজকে বলেন, এ বিষয়ে এখন আলাদা করে কিছু বলতে চাই না। সোমবার ৫ অক্টোবর আমরা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। আমরা কিন্তু বলিনি আমরা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছি। আমাদের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ। প্রাণিদেহে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে সফলতা পাওয়া গেছে। এখন বাকি কাজগুলো আমরা দ্রুতই করতে চাই। তবে এর জন্য বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) অনুমতি ও ক্লিনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (সিআরও) মাধ্যমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করব।

তিনি জানান, বায়োআর্কাইভের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশে^র যে কোনো অঞ্চলের গবেষকদের অনুসন্ধানে এমন বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে, যা সাম্প্রতিক কোনো উদ্ভাবনী কাজে সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া এমন বহু সম্ভাবনাময় গবেষণাপত্রগুলো যেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নজরে পড়ে এবং তাতে বিদ্যমান ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করা যায়।

প্রসঙ্গত, ২ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে নিজ প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ভ্যাকসিন প্রাণিদেহে প্রয়োগ করে সফলতা পেয়েছে বলে জানিয়েছিল গ্লোব বায়োটেক। ওই সময়ই প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল সব কিছু যদি ঠিকভাবে চলতে থাকে তাহলে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে তারা। ওই সময় জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত গবেষণা কেন্দ্রে প্রাণিদেহের ওপর প্রথম ট্রায়াল সম্পন্ন হয়। এরপর গবেষণার বাকি কাজ করা হয় রাজধানীর তেজগাঁও ল্যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App