অভিযোগ মির্জা ফখরুলের
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার পথে বাধা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম

খালেদা জিয়া ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সরকার প্রধানের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রবিবার (২৩ জুন) সকালে নয়া পল্টনে এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু আরোগ্য কামনায় দোয়া মাহফিলে দলের মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
তিনি ‘এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বার বার বলেছেন, ম্যাডামের(খালেদা জিয়া) যে অসুখ, সেই অসুখের চিকিৎসা এখানে(বাংলাদেশে) করা সম্ভব নয়। তার যে মাল্টি ভ্যারিয়াস ডিজিজেস আছে তার চিকিৎসা করতে হলে উন্নত দেশের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হসপিটাল প্রয়োজন….বার বার একথাগুলো বিভিন্নভাবে বলার পরেও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ বলেছে এবং কি বিদেশি মিশনগুলো এখানে(বাংলাদেশে) আছে তারাও বার বার বলেছে, বাইরে থেকে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই বলেছে।
আরো পড়ুন: খালেদার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে যা বললেন আইনমন্ত্রী
কিন্তু শেখ হাসিনা তার যে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা সেই প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাকে কোনোভাবে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
হঠাৎ অসুস্থতার কারণে শুক্রবার গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিসাধীন আছেন।
৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস ছাড়াও হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
‘কারাগারে চিকিৎসা পাননি’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি আজকে এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তিনি দীর্ঘকাল ধরে কারারুদ্ধ রয়েছেন…. আপনারা সবাই জানেন। শুধু এই টুকু বলতে চাই, সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাকে বাসায় থাকার সুযোগ দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন, বন্দি আছেন।
আমরা এও জানি যে, তিনি অবরুদ্ধ অবস্থায় কারাগার থেকেই অসুস্থ হয়েছেন। তার সেখানে কোনো চিকিৎসা হয়নি। তিনি বার বার কমপ্লেইন করেছেন কিন্তু সরকার তা শুনেনি, তার চিকিৎসাও দেয়নি। পরবর্তীকালে তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে সেখানেও তার কোনো সুচিকিৎসা হয়নি। বাসা(গুলশানের ফিরোজা) আসার পরে তাকে শর্ত দেয়া হয়েছে তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না, দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।
‘খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে’
বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার জীবন মৃত্যু এতোই সন্ধিক্ষণে আমি আপনাদেরকে বলছি, আপনারা প্রাণখুলে তার জন্য দোয়া করুন। শুধু দোয়াই নয়, আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তার সুচিকিৎসা করার জন্য, সেই চেষ্টাই আমাদেরকে করতে হবে। দেশনেত্রীর জন্য যা করার দরকার সেটাই আমাদেরকে করতে হবে।
আসুন পরম করুনাময় আল্লাহতালার কাছে এই দোয়া চাই, আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক যিনি আমাদেরকে স্বৈরাচারের কাছে গণতন্ত্র ফেরানোর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি এই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আরো শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন, যিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানে সংযোজন করে এ দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, যিনি এদেশকে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করেছিলেন যে কারণে তখন বিদেশের পত্রিকাগুলোতে লেখা হতো ‘বাংলাদেশ ইজ এ ইমার্জিং টাইগার’ … কি দুর্ভাগ্য আমাদের সেই নেত্রী আজকে বিনা চিকিৎসায় আজকে বন্দি অবস্থায় তিনি আজকে মৃত্যু শয্যায়।
আরো পড়ুন: খালেদা জিয়ার হার্টে ‘পেসমেকার’ বসানোর সিদ্ধান্ত
আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে মির্জা ফখরুল নেতা-কর্মীদের দোয়া করার অনুরোধ ধরে বলেন, আসুন আমরা আজকে কায়মনো বাক্যে দোয়া করি… আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের দোয়া শুনেন, আল্লাহতায়ালা যেন তাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন। আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার যেন আমরা জেগে উঠতে পারি এবং এই যে দানব যারা আমাদের রাষ্ট্রের সব কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে তাকে যেন আমরা পরাজিত করতে পারি। আসুন আমরা সেই দোয়া করি আল্লাহ তালার কাছে চাই, তিনি যেন আমাদের সেই তওফিক দেন, সেই শক্তি দেন যেন আমরা নিজের পায়ে নিজেরা দাঁড়াতে পারি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আশু আরোগ্য কামনায় বিএনপি রবিবার ঢাকাসহ সকল মহানগর ও জেলায় দোয়া মহফিল করছে।
দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ কয়েক‘শ কর্মী-সমর্থক অংশ নেন।