ছাগলকাণ্ডের মতিউর করতেন শিবির!

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ছাগলকাণ্ডে দেশজুড়ে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ছাত্র জীবনে ছাত্র সংগঠন শিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিএনপির আমলের সাবেক দুই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও তার সখ্যতা ছিল। চাকরি জীবনে উত্থান ঘটেছে বিএনপির আমলেই।
তবে, সব সরকারের আমলেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে ধনকুবের হয়েছেন মতিউর। স্বর্ণ চোরাচালান কারবারেও তার সিদ্ধহস্ত ছিল। বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক মতিউরের বিরুদ্ধে কানাডা, মালয়েশিয়া, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে। পত্রিকাটির প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিদেশ থেকে একজন বড় ব্যবসায়ী টেলিফোনে তাদের জানান, নিজের মাকে বিপদে ফেলে টাকা আদায় করেছেন মতিউর। এতো খারাপ লোক কখনোই দেখিনি। তাকে ঘুষ না দিয়ে রক্ষা পায়নি কোনো ব্যবসায়ী।
ব্যাংক সেক্টরের একজন শক্তিশালী সচিব কয়েকশ’ কোটি টাকার বিনিময়ে তাকে পরিচালক বানিয়েছেন। ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্নীতিবাজ মতিউর কিভাবে পরিচালক হলো এ আলোচনা ব্যাংকপাড়ার সবার মুখেই শোনা যায়। স্বামীর ক্ষমতা অপব্যবহার করে মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীও নরসিংদীতে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক বনে গেলেন- এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আরো পড়ুন : ছেলে-স্ত্রীসহ মতিউরের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা
ব্যবসায়ীরা জানান, মতিউর রহমান আন্ডারগ্রাউন্ডের গণমাধ্যমকে দিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করাতেন। আর ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে বলতেন, এটা কিন্তু কাস্টমসের চেয়ারম্যান করাচ্ছেন। রক্ষা পেতে হলে টাকা লাগবে। চেয়ারম্যানকে ভাগ দিতে হবে। এরকম স্টাইলে কয়েক শ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়েছেন মতিউর। এটা হলো তার টাকা ইনকামের এক ধরনের পদ্ধতি। ঢাকা এয়ারপোর্ট, যশোর এয়ারপোর্ট, বেনাপল স্থলবন্দর ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। এয়ারপোর্ট থেকে স্বর্ণ চোরাচালানে তার সম্পৃক্ততা ছিল। স্বর্ণ ধরবি ৫ কেজি, পাচার করবি ৫০ কেজি। এটা তার ডায়ালগ ছিল। এটাও বিমানবন্দরের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের মুখে মুখে ছিল। এয়ারপোর্টে ক্লিয়ারিং ও ফরওয়ার্ডিং এজেন্টদের নিয়েও তার ব্যবসা ছিল। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিরও মূল হোতা মতিউর।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা গণমাধ্যমকে জানান, এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালনকালে মতিউর কমপক্ষে ৩ হাজার কোটি টাকা নিয়েছেন। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা হবে তার। সে হলো এই যুগের টাকার কুমির।
অনুসন্ধানে নরসিংদীতে মতিউরের স্ত্রীর পাহাড় সমান অর্থের তথ্য পেয়েছেন। এয়ারপোর্ট ১৮টি সংস্থা কাজ করে, তারপরও স্বর্ণ পাচার করে এসেছেন মতিউর। অর্থাৎ নিজে হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন, অন্যদিকে অন্যান্য সংস্থার এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের কোটিপতি বানিয়েছেন। তিনি হলেন কোটি টাকা বানানোর কারিগর। টাকা কামানোর সব রাস্তা তারা জানা। দুর্নীতি করে নিখুঁতভাবে। তার ভয়ে সবাই টটস্থ থাকতো। এমনকি এনবিআরের কোনো কোনো শীর্ষ কর্মকর্তা মতিউরকে দেখে দাঁড়িয়ে যেতেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্নীতিবাজ মতিউর রহমানরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রয়োজনে প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। যাতে এই ধরনের মতিউররা দুর্নীতি করার সাহস না পায়।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, এখনো সময় আছে, দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ মতিউর রহমানদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিকে ড. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে পূর্বের চার দফা দুদকের অনুসন্ধানের যাবতীয় ফাইল তলব করেছে কমিশন। একই সাথে ২০০৪, ২০০৮, ২০১৩ ও ২০২১ সালে পরিসমাপ্তকৃত ৪টি দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে কোনো অসংগতি আছে কি না, থাকলে দুদকের কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত সেটা তদন্ত করতে বলা হয়েছে। মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান নথি খুঁজে না পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।