এনবিআরের প্রথম সচিবের নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার পরিবারের স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ফয়সাল এনবিআরের আয়কর বিভাগের প্রথম সচিব (ট্যাকসেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) হিসেবে কর্মরত।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় তার নামে-বেনামে থাকা সব সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোকের আদেশ দেয় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। মামলায় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল তথ্য নিশ্চিত করেন।
দেশে বেশ কিছুদিন ধরেই সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদ জব্দ করা হয়েছে কয়েক দফায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেরই এক কর্মকর্তা (পরে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়) মো. মতিউর রহমানের 'বিপুল সম্পদ' এর ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমগুলো সরব। আদালতের আদেশে জব্দ করা হয়েছে, তার ও তার পরিবারের সব ব্যাংক হিসাব ও শেয়ারবাজারের ১৬টি বিও হিসাব।
ঈদুল আজহায় তার সন্তানের একটি ছাগল কেনাকে কেন্দ্র করে আলোচনার সূত্রপাত হওয়ায় কোনো কোনো গণমাধ্যমে ইস্যুটিকে "ছাগলকাণ্ড" হিসেবেও অভিহিত করা হয়েছে।
এসব আলোচনার মধ্যেই বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) আরেক এনবিআর কর্মকর্তা কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের সম্পদ জব্দের খবর এলো। এর আওতায় কী পরিমাণ সম্পদ আসছে, নথি হাতে না থাকায়, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।
তবে, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব মিলিয়ে ১৬ কোটি টাকা ক্রোকের আওতায় আসবে। আর ফয়সালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ হাজার কোটি টাকার বলেও জানান তিনি।
আলম জানান, দুদকের তদন্তকারী দল এ পর্যন্ত ঢাকায় তার ফ্ল্যাট, দুটি প্লট, সঞ্চয়পত্রসহ ১৬ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। এসব সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ (অবরুদ্ধ) করার জন্য আজ দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়।
লিখিতভাবে দুদকে জানানো হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের জন্য ৭০০টির বেশি ব্যাংক হিসাব খোলেন এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সাল। নিজের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনের নামেও অ্যাকাউন্ট খোলেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আবু মাহমুদ ফয়সাল নিজ নাম ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকার একটি আবাসন প্রকল্পে পাঁচ কাঠার প্লট কেনেন মোট দুই কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে ওই প্রকল্পের প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া 'অবৈধ' সম্পদ বা সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যেতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয় আবেদনে। এতে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে। কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে, যৌক্তিক কারণ থাকলে আদালত সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তের সম্পদ জব্দ বা ক্রোক করার নির্দেশ দিতে পারে।
কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, তদন্ত বা মামলার যেকোনো পর্যায়ে আদালত কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি জব্দ করার আদেশ দিতে পারেন। “আইন অনুযায়ী তদন্তের সময়ই অনুসন্ধানকারীদের যদি মনে হয় ওই ব্যক্তির অবৈধ সম্পদ আছে এবং সেগুলো বেহাত হয়ে যেতে পারে, তাহলেই অনুসন্ধানকারী ওই সম্পদ জব্দ করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন,” বলেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের আগে তদন্ত চলাকালেই আদালতের কাছ থেকে সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেয়া হয়েছিল। ক্রোক বা জব্দ হওয়ার পর সম্পদ বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই থাকবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ওই সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।
আদালতে দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল একটি প্লট বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রির মাধ্যমে হস্তান্তর হয়ে যাওয়া সম্পত্তির ক্ষেত্রে কী হবে? এমন প্রশ্নে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, এই অপরাধলব্ধ সম্পদ যার কাছে বিক্রি করা হবে তিনিও এই মামলার বিচারের আওতায় চলে আসবেন।
আইনে বলা আছে, অপরাধলব্ধ সম্পত্তি যিনি কিনবেন তাকে অপরাধের সহযোগী হিসেবে আইনের আওতায় আনতে হবে, বলেন তিনি। এনবিআরের প্রথম সচিব মি. ফয়সাল আত্মীয় স্বজনের নামের অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বলে আবেদনে উল্লেখ করেছে দুদক। বাংলাদেশে দুর্নীতির যে কোনো অভিযোগের বিচার হয় ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী। এই আইনে সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিচার করা হয়।
আইনটিতে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের ধারায় বলা হয়েছে, যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তির নিজ নামে বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে অসাধু উপায়ে অর্জিত কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দখলে রয়েছে বা মালিকানায় রয়েছে যেটি তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ- তাহলে সেটি তদন্তের আওতায় আসবে।
একই সঙ্গে সে ওই সম্পত্তির দখল সম্পর্কে আদালতের কাছে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে তা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাজা দশ বছরের কারাদণ্ড এবং ন্যূনতম সাজা তিন বছরের কারাদণ্ড। এছাড়া অর্থদণ্ড এবং ওইসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধানও রয়েছে এই আইনে। এছাড়া সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে সর্বোচ্চ সাজা তিন বছরের কারাদণ্ড।