সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়েছি, অর্ডার করিনি: এসবি প্রধান

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম

মনিরুল ইসলাম
পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংবাদপ্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয় গণমাধ্যমে। সেই প্রতিবাদলিপির বিষয়ে মনিরুল ইসলামকে প্রশ্ন করা হলে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আপনাদের কোনো অর্ডার করিনি। অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি।
সোমবার (১ জুলাই) সকালে গুলশানের দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এসবি প্রধান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
সম্প্রতি গণমাধ্যম কয়েকজন পুলিশ সদস্যের দুর্নীতি নিয়ে কাজ করেছে। পুলিশ বাহিনী সবসময় বলে, ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না। এই জায়গাতে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন একটি প্রতিবাদ পাঠালো এবং এটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হলো। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি ব্যক্তির দায় সংগঠনের বা বাহিনীর না। কিন্তু পাশাপাশি অতিরঞ্জিত এবং খণ্ডিত তথ্য থাকে। যেমন আমাদের এক কর্মকর্তার বিষয়ে বলা হয়েছিল তিনি সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আসলে তিনি পালিয়ে যাননি।
অতিরিক্ত আইজিপি আরো বলেন, সে কারণে প্রতিবাদের পাশাপাশি আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। প্রতিবাদলিপিতে আমরা কোনো নির্দেশনা দেইনি। আপনাদের কোনো অর্ডার করিনি। শুধু পুলিশ নয়, যেকোনো নিউজ করার আগে ভালো করে যাচাই-বাছাই করার অনুরোধ করেছি। এটি পেশাগতভাবে আসলে যেকেউ করতে পারে। অনুরোধ রাখা না রাখা আপনাদের বিষয়। আপনাদের শুধু অনুরোধ করেছি।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন পুলিশ বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে সম্প্রতি প্রচারিত বিভিন্ন সংবাদের নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে এটি এ ধরনের সংবাদকে 'অতিরঞ্জিত' হিসেবে অভিহিত করে। একইসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশে 'অধিকতর সতর্কতার' অনুরোধ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, "নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশে পাঠকের কাছে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা রয়েছে বলে [আমরা] মনে করি। অথচ কোনো এক রহস্যময় কারণে এক শ্রেণির গণমাধ্যম অতি সুকৌশলে বাংলাদেশ পুলিশকে বিতর্কিত করে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টায় মেতেছে, যা সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধকারী অপসাংবাদিকতারই নামান্তর বলে পরিগণিত। গণমাধ্যমের এ ধরনের একপেশে আচরণ সাধারণ পাঠকের সঙ্গে প্রতারণারই শামিল," উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
এসময় পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দেশের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ধরনের 'অপসাংবাদিকতা'র নেতিবাচক প্রভাবের কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, "[এটি] বাংলাদেশ পুলিশের সৎ, নিষ্ঠাবান, পেশাদার ও দেশপ্রেমিক সদস্যদের মনোবল ধ্বংসের অপপ্রয়াস বলে প্রতীয়মান হয় যা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।"
অ্যাসোসিয়েশন বিবৃতিতে দাবি করেছে, "স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং গণতন্ত্র ও দেশবিরোধী চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত তথ্য প্রকাশ করে নিয়মিত পুলিশ কর্মকর্তাদের চরিত্র হননে ব্যস্ত। সংগঠনটি এসব গোষ্ঠীর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা বজায় রাখার জন্য গণমাধ্যমকে আহ্বান জানিয়েছে। "[আমরা] গণমাধ্যমে কোনো খণ্ডিত বা আংশিক সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদ করতে চাই। গণমাধ্যমে কোনো ঘটনার সামগ্রিক চিত্র উঠে আসুক, সত্য উন্মোচিত হোক," বলা হয় বিবৃতিতে।
"জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য [গণমাধ্যমকে] অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোন ধরনের রিপোর্ট প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের জন্যও আমরা সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি।"