ভুয়া ঠিকানা দিয়ে যেভাবে চাকরি নেন আবেদ আলী

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫৭ পিএম

প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। ছবি : সংগৃহীত
প্রশ্নপত্র ফাঁসকাণ্ডে গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার হলেও চাকরিতে নিয়োগের সময় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সিরাজগঞ্জ উল্লেখ করেছিলেন। সরকারি কর্ম কমিশন এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরি থেকে বরখাস্তের চিঠি সৈয়দ আবেদ আলীর স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়। সৈয়দ আবেদ আলী ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পিএসিতে গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন। সে সময় তিনি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করেছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের শ্রীফলতলা গ্রামে। বাবা : সৈয়দ আবদুর রহমান। এই ঠিকানা উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের গাড়িচালক পদের সরকারি চাকরিতে যোগ দেন তিনি।
এছাড়া ২০১৪ সালে নন-ক্যাডারের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পিএসসির চাকরি থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল বলেও পিএসসি’র প্রতিবেদনে জানানো হয়। পিএসসি জানায়, ২০১৪ সালে ২২ এপ্রিল নন-ক্যাডারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে হলের বাইরে থেকে অবৈধভাবে সরবরাহকৃত প্রশ্নের উত্তরসহ ৪টি লিখিত উত্তরপত্র হাতেনাতে ধরা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনের ধারায় মামলা করা হয়।
আরো পড়ুন : আবেদ আলীসহ ৭ আসামি দোষ স্বীকার করতে চান
ওই মামলার তদন্তে সৈয়দ আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য–প্রমাণ মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। সৈয়দ আবেদ আলী বিরুদ্ধে বহু বেআইনি কর্মের দুর্নাম আছে, তিনি অভ্যাসগত অপকর্মে জড়িত বলেও পিএসসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ওই সময়ে আবেদ আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণী তার স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানো হয়। ডাক বিভাগ সৈয়দ আবেদ আলীর স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি গ্রহণের জন্য কাউকে না পেয়ে অভিযোগনামা ও অভিযোগ বিবরণীটি পিএসসিতে ফেরত পাঠায়। একইভাবে সাময়িক বরখাস্তের আদেশটিও ফেরত আসে।
অভিযুক্ত কর্মচারীর স্থায়ী ঠিকানাটির সঠিকতা যাচাই করে ২০১৪ সালের ১৮ নভেম্বরে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক পিএসসিকে জানান, তার স্থায়ী ঠিকানাটি সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকায় সৈয়দ আবেদ আলী বা তার পূর্ব পুরুষদের কেউ তালিকাভুক্ত নন। অর্থাৎ সৈয়দ আবেদ আলী ভুয়া স্থায়ী ঠিকানায় চাকরি নিয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে অপর একটি বিভাগীয় মামলা চলছে।
সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। তার এক ভাই কৃষিকাজ করেন। আরেক ভাই অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এলাকার মানুষের কাছে আবেদ আলী পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে।
স্থানীয়রা জানান, আবেদ আলী নিজ গ্রামে প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল ‘ডুপ্লেক্স’ বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। তিনি মাদারীপুরে গরুর খামার ও বিপণিবিতান নির্মাণ করছেন, যার একাংশ সরকারি জমিতে বলে অভিযোগ রয়েছে।