কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন আপাতত কোন দিকে যায় তা নিয়ে ধোঁয়াশায় সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে আপিল বিভাগ থেকে আন্দোলনকারীদের দাবির পক্ষে কোনো আদেশ এলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে- এমন ধারণা করছিল সবাই, কিন্তু হয়েছে ঠিক উল্টো। বুধবার (১০ জুলাই) কোটা বাতিলে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের ওপর আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থা জারি করার পর অখুশি হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে কোটা সংস্কারে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন নির্ধারিত স্পটে। সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে বসে বসে স্লোগান আর গান-কবিতায় মাতিয়ে রাখছেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে রাজধানীর বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। বিশেষ করে নারী-শিশু এবং বয়স্ক মানুষ পড়েছেন বেশি দুর্ভোগে।

আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। বকশিবাজার মোড় ও চানখারপুল মোড়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা, যার প্রভাব পড়েছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে। অন্যদিকে পল্টন মোড়-জিপিও সড়কে বসে আন্দোলন করায় গুলিস্তান, আশপাশের এলাকা এবং মতিঝিলে ছড়িয়ে পড়েছে যানজট। ফলে বেড়েছে মানুষের ভোগান্তি। এছাড়া শাহবাগ, সাইন্সল্যাব, ফার্মগেট, বাংলামোটর, আগারগাঁও, মহাখালী, বনানী এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে পড়ায় ভোগান্তি দেখা দিয়েছে বিমানবন্দরের দিকে যাওয়া যাত্রীদেরও।

আপিল বিভাগের আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, এটা আমাদের নির্বাহী বিভাগের কাছে দাবি। কিন্তু হাইকোর্ট যেগুলো করছে পেছানো, স্থগিত করা, এক মাস, দুই মাস, এক সপ্তাহ, এইগুলো প্রহসনের চরম মাত্রা।’

হাইকোর্টের রায় নিয়ে আন্দোলনের পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে বসব, সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’

আপিল বিভাগের রায় ঘোষণা সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে একটা জাজমেন্ট হয়ে গেছে। আন্দোলন যারা করছে তা অ্যাপ্রিসিয়েট করা যায় না। রাস্তায় শ্লোগান দিয়ে আদালতের রায় বন্ধ করা যাবে না। আন্দোলনকারীদের উসকিয়ে দেয়া হয়েছে, বাচ্চাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। টেলিভিশনে অনেকেই কথা বলছেন। শিক্ষকদের উচিত তাদের বোঝানো।

উচ্চ আদালতের রায়ের পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি শিক্ষার্থীদের আদালতের ওপর আস্থা রেখে নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

আরো পড়ুন: এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন আটকে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি। তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানীতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাদা পোশাকেও আছেন গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।