যে কারণে আবেদ আলীর বিচার হয়নি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৫:১১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আবেদ আলী। ঢাকায় চলে আসেন মাত্র ৮ বছর বয়সে, সেখানেই নানা রকম ছোটখাটো কাজ করতেন। এক সময় গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন সরকারি কর্মকমিশনে। তবে নুন আনতে পান্তা ফুরোনো এই মানুষটি বনে যান কোটি টাকার সম্পদের মালিক। যা বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে মূলধারার মিডিয়ার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে গত ৫ জুলাই সরকারি কর্মকমিশনের দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীও ছিলেন।
জানা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সিন্ডিকেটের মূল হোতা এই আবেদ আলী । তার বিরুদ্ধে ১০ বছর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে পাবলিক পরীক্ষা আইনে করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। ২০১৫ সালে আবেদ আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। ৯ বছরে এ মামলার ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে আবেদ আলীর বিচার হয়নি। সেই সুযোগে তিনি সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে বিসিএসসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চালিয়ে গেছেন।
আরো পড়ুন: বেরিয়ে এলো প্রশ্নফাঁসের মূল হোতাদের নাম
২০১৪ সালে আবেদ আলীর বিরুদ্ধে জমা দেয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছিল, সাড়ে ছয় লাখ টাকার বিনিময়ে আবদুর রহমান নামের এক পরীক্ষার্থীকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। আবদুর রহমানের কাছেই জানা যায়, কীভাবে পিএসসির সে সময়ের সাঁটমুদ্রাক্ষরিক তারিকুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীদের সহায়তায় বিসিএস ক্যাডার, নন-ক্যাডারসহ সব পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নপত্র বাইরে নিয়ে আসতেন আবেদ আলী। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পিএসএসির অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজশে এটি করা হতো। পরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দিয়ে উত্তরপত্র পূরণ করে সেটি পরীক্ষার এক ঘণ্টা বা আধা ঘণ্টা আগে পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো হতো।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, পিএসসির মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি জীবনের শুরু থেকেই রয়েছেন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে অবৈধ সিন্ডিকেট গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। এই সিন্ডিকেটের কিছু সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরিতে যোগদানের আগে সহায়-সম্বলহীন ছিলেন; তারা এখন সরকারি অনুমোদনক্রমে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি-গাড়ি, অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। সৈয়দ আবেদ আলীর মতো একজন কর্মচারী প্রতি বছর দেশের বাইরে ভ্রমণের অনুমতি পেয়েছেন, যাতে পিএসসি কর্তৃপক্ষের অসতর্কতা বা উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়।
শুধু দেশের বাইরে ভ্রমণই নয়, আবেদ আলী অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বলে জানা গেছে। ঢাকায় একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে ডুপ্লেক্স ভবন, মার্কেট, মসজিদ, ঈদগাহ নির্মাণ করেছেন। একরের পর একর জমি কিনেছেন। এলাকায় তিনি দানবীর হিসেবে পরিচিত। ২০২৩ সাল থেকে স্থানীয় রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে ওঠেন আবেদ আলী। দামি গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করতেন আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান (সিয়াম)। বাবা-ছেলে প্রচুর দান-দক্ষিণা করতেন, যার ছবি-ভিডিও ফেসবুকে পোস্টও করতেন।
গত কোরবানির ঈদেও দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে গোশত দেন সোহানুর। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে ছিলেন, যে পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বেরিয়ে এসেছে আরো মজার তথ্য। সম্পদশালী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের পদবিও বদলে ফেলেন আবেদ আলী। পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান মীরের ছেলে আবেদ আলী। তার আরো দুজন ভাই আছেন। বড় ভাই জাবেদ মীর কৃষিকাজ করেন। ছোট ভাই সাবেদ মীর এলাকায় জমিজমা দেখভাল করেন। আরো জানা গেছে পশ্চিম বোতলা গ্রামে সৈয়দ বংশের কোনো বাড়ি নেই। সেখানে মীর বংশের ছয়টি পরিবার থাকে। আবেদ আলী মীর বংশের ছেলে। অর্থবিত্তের সঙ্গে তিনি মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বিভিন্ন মহলে এর সুযোগও নিতেন।