নিজের যত সম্পদের বিবরণ দিলেন আবেদ আলী

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৬:০৪ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাসহ (বিসিএস) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের চক্রের প্রধান ভূমিকায় ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী, যিনি পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) একজন সাবেক গাড়িচালক।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার আবেদ আলী জীবনের শুরুতে মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ থেকে শুরু করে রিকশা চালানো, বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন। একসময় তিনি গাড়ি চালানো শিখলে চাকরি হয় তার এবং এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো এই মানুষটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান।
কারণ পিএসসি’র সাবেক এক চেয়ারম্যানের গাড়ি চালানোর দায়িত্ব পাওয়ার পর ভাগ্যের চাকা রাতারাতি ঘুরতে থাকে। কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। সেই চক্রটি পিএসসি’র ৩৩ থেকে ৪৫তম বিসিএসের প্রশ্নফাঁস করে। এছাড়াও তারা নন-ক্যাডার পদের পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তারা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে। আবেদ আলী নিজেই এখন এককভাবে শতকোটি টাকার মালিক। অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হোটেল, খামার, বাগানবাড়ি, বিদেশে অর্থ পাচার, বাড়ি নির্মাণসহ অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। গাড়িচালক হিসেবে কাজ করা আবেদ আলীর নিজেরই এখন কয়েকজন গাড়িচালক রয়েছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী জানিয়েছেন, তিনি শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ঢাকায় তার একটি ছয়তলা বাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও একটি গাড়ি রয়েছে। গ্রামের বাড়িতে রয়েছে ডুপ্লেক্স ভবন। তবে আবেদ আলীর আরো সম্পদ রয়েছে।
আরো পড়ুন: আবেদ আলীর ‘দোসর’ প্রিয়নাথেরও অঢেল সম্পদের সন্ধান
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানে দান-খয়রাত করে নিজেকে দানবীর হিসেবে প্রমাণ করেন আবেদ আলী। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দুর্দিনের কষ্ট, অভাব অনটনের আবেগঘন বক্তব্য দিয়ে মানুষের নজর কাড়তেন।
তার অবৈধ টাকার গরমে বড় ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। টাকা খরচ করে বাগিয়ে নিয়েছেন একই সময়ে ছাত্রলীগের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদবি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সিন্ডিকেটের মূল হোতা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর বিরুদ্ধে ১০ বছর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে পাবলিক পরীক্ষা আইনে করা মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ। ২০১৫ সালে আবেদ আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। ৯ বছরে এ মামলার ১২ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র দুজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ফলে আবেদ আলীর বিচার হয়নি। সেই সুযোগে তিনি সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে বিসিএসসহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চালিয়ে গেছেন।
আরো পড়ুন: বেরিয়ে এলো প্রশ্নফাঁসের মূল হোতাদের নাম
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৮ জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার ওয়াসা রোডের নিজ ফ্ল্যাট থেকে সৈয়দ আবেদ আলী ও তার বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান ওরফে সিয়ামসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিসিএসের ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার পদের ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে ৭ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা বলেছেন, প্রশ্নপত্র চাকরিপ্রার্থীদের হাতে দেয়া হতো না। পরীক্ষার আগের রাতে ঢাকা ও এর আশপাশ এলাকায় নিরাপদ জায়গায় (চক্রের সদস্যদের ভাষায় বুথ) রাখা হতো। রাজধানীর পল্টনে একটি গোডাউনে চাকরিপ্রার্থীদের জড়ো করা হতো। সারা রাত প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করিয়ে সকালে পরীক্ষা দিতে পাঠানো হতো।
সর্বশেষ রেলওয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় ৪৬ জন প্রার্থীকে রাজধানীর পল্টনের একটি পানির ফিল্টারের গুদামে রাখা হয়েছিল। বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এই চক্রটি ২০০২ সালে ২৪তম বিসিএস পরীক্ষা থেকে শুরু করে সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও তারা ফাঁস করেছে। এর পাশাপাশি পিএসসির অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নন ক্যাডার পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তারা ফাঁস করেছে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান মোহাম্মদ আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে অনেকের নাম আসছে। জড়িত প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হবে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রশ্নফাঁস ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেনো কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। যারা জড়িত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।