শিক্ষার্থীদের অবরোধে রাজধানীতে তীব্র যানজট, দুর্ভোগে মানুষ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ০৪:০৮ পিএম

ফাইল ছবি
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তারা। এতে রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর থেকে রাজধানীর নতুনবাজার-রামপুরাগামী রাস্তা অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। তাতে প্রগতি সরণি এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
একই দাবিতে কুড়িল এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে কুড়িল থেকে এয়ারপোর্টগামী সড়ক ও কুড়িল থেকে রামপুরাগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। একইসময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ বেঁধেছে। তাতে শাহবাগ, ফার্মগেট, মগবাজার, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তানে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সেসব রাস্তার দুই পাশে শতশত যানবাহন আটকে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও রাস্তায় নেমেছেন। শিক্ষার্থীদের ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘৫২'র হাতিয়ার, গর্জে উঠো আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। তারা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝাচ্ছি তারা যেন রাস্তা ছেড়ে চলে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। তারা প্রথমে সেই পরিপত্র ফিরিয়ে আনা অর্থাৎ কোটা তুলে দেয়ার দাবি জানালেও পরে সংস্কারের দাবি তুলেছে। হাইকোর্টের এই আদেশে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। সেই শুনানিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তবে শিক্ষার্থীরা সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটার বিষয়ে ফয়সালা চাইছেন, আর ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মঙ্গলবার বাদ দিয়ে প্রতিটি কর্মদিবসেই বাংলা ব্লকেড নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন করায় যান চলাচলে তীব্র ভোগান্তি হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করলেও বৃহস্পতিবার থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে, একাধিক এলাকায় বাধাও দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনেও বলেছেন, কোটার বিষয়টি ফয়সালা হবে আদালতেই। আর রাস্তায় ধ্বংসাত্মক কিছু হলে আইন ‘নিজস্ব গতিতে চলবে। অন্যদিকে রবিবার শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মেনে নিতে রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দেয়ার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেয়ার দাবিও জানিয়েছে।
বঙ্গভবনে স্মারকলিপি দিয়ে ফেরার পথে গুলিস্তানে আয়োজিত সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, যদি মামলা তুলে নেয়া না হয় আমাদের কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এর দায় নিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অবশ্য বলেছেন, আন্দোলনকারীরা যতই মামলা তোলার আল্টিমেটাম দিক, মামলার তদন্ত চলবে। মেরিট দেখেই মামলা করা হয়েছে।