নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে উন্নয়নের সড়কে আবার নিয়ে যাব

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এম পি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে উন্নয়নের যে সড়ক, উন্নয়নের যে অভিযাত্রা, সে জায়গায় আবার নিয়ে যাব। কোন ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য বাংলাদেশকে থামিয়ে দিতে পারবেনা। কেননা আমরা মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার, মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে আমাদের প্রেরণা, সামনের পথ দেখানোর শক্তি। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নিয়েই এই বাংলাদেশকে আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করব। এই যাত্রায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবেনা।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনাল ভবনে ঘাট ও নৌকর্মীদের মাঝে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মোস্তফা কামাল, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে পাঁচশত ঘাট ও নৌকর্মীর মাঝে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এবং ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিকে কেন্দ্র করে আমাদের এই অগ্রসরমান বাংলাদেশ, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারাবিশ্বে যখন আমার খ্যাতি অর্জন করেছি, সেই বাংলাদেশের উন্নয়নকে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হলো, ধ্বংসপ্রাপ্ত করা হলো। আমরা মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে পৃথিবীর কাছে একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বীকৃতি পেয়েছি, সেই মানবিক বাংলাদেশকে কিভাবে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বিনির্মাণ করে আমরা সমগ্র পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম যে বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, সেই বাংলাদেশকে সারা পৃথিবীর কাছে খাটো করার অপচেষ্টা করা হলো। আমাদের স্বপ্নের যে মেট্রোরেল সেখানে কিভাবে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে যে টোলপ্লাজা ছিল; সেই টোলপ্লাজা ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা পারেনি- কিন্তু সেতু ভবন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন অনেক বেসরকারি ইলেকট্রনিক মিডিয়া রয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের কারণে আমরা অনেক কিছুতে সুবিধা পাচ্ছি। তবে এক সময় বাংলাদেশ টেলিভিশনই ছিল একমাত্র ডিজিটাল প্লাটফর্ম। সেই বাংলাদেশ টেলিভিশন ধীরে ধীরে আজকের এই পর্যায়ে এসেছে। এই বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্লাটফর্ম থেকে আমাদের ডিজিটাল প্লাটফর্ম, মিডিয়া প্লাটফর্ম এত-বড় পরিধি তৈরি হয়েছে। যেখানে দেশের কথা বলা হয়, মানুষের কথা বলা হয়। সেই জাতীয় সম্প্রচার কেন্দ্র বাংলাদেশ টেলিভিশন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানকার যে আর্কাইভ বাংলাদেশের ৫০ বছর, ৫৪ বছরে বাংলাদেশ কিভাবে ধীরে ধীরে আজকের এ পর্যায়ে পদার্পণ করেছে, তা সংরক্ষণ করা ছিল এখানে। সেই সংরক্ষিত ডকুমেন্টগুলো পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। আপনি যদি জানতে চান আজ থেকে ১৫, ২০, ৩০, ৪০, ৫০ বছর আগে বিটিভি কি ধরনের সংবাদ পরিবেশন করেছে, কি ধরনের অনুষ্ঠান করেছে, আমরা বাংলাদেশ কোথায় ছিলাম; সেগুলো এখন আমরা দেখতে পারবনা। কারণ সেই আর্কাইভ পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই যে এত সুন্দর স্থাপনাগুলো আমরা কত গর্ব করে বলতাম বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। সে ডিজিটাল বাংলাদেশের মূল স্টেশন ডেটা সেন্টার সেটাকে পুড়িয়ে দেয়া হলো। এখন পর্যন্ত আমরা পুরোপুরি ইন্টারনেট পাইনি, কানেকশন বঞ্চিত। এরকম একটি ভয়াবহ অবস্থা। তার থেকেও বড় কথা যে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নাই। এরকম একটি পরিবেশ তৈরি করে দেয়া হলো। অকাতরে কিভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে এই যাত্রাবাড়ীতে একজন নারী পুলিশকে হত্যা করা হলো। তাকে পিটিয়ে হত্যা করে শান্ত হয়নি, হত্যা করার পর তার মুখ থেঁতলা করে দিয়ে হানিফ ফ্লাইওভারের উপরে টানিয়ে দেয়া হয়েছিল। গাজীপুরে মানুষগুলোকে হত্যা করে উলঙ্গ করে টানিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা দেখেছি, সাইদুর রহমান বাংলা ভাই জঙ্গিরা আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে দেখেছেন- নির্যাতন কিভাবে হত্যা করার পর টানিয়ে রাখা হতো সেই ভয়াবহ দৃশ্য এখানে করা হয়েছে। কি কারণে এই ধরণের সংঘাত এই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে? এই ধরণের সহিংসতা কেন? কারণে আমরা জানি না। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে গেছে এটাই কি আমদের কষ্ট? এটা আমাদের গর্ব নাকি অহংকার! এই ঘটনা চলাকালীন সময়ে একজন ইউনিভার্সিটি পাশ করা ছাত্রী আমাকে টেলিফোন করে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলো আমি যখন স্কুলে এসেম্বলি করতাম তখন স্কুলের টিচার বলতো বাংলাদেশ ইজ এ পুয়র কান্ট্রি; এখন বাংলাদেশকে বলা হয় বাংলাদেশ ডেভেলপিং কান্ট্রি। এটা কতো বড় গর্বের। আজ বাংলাদেশের ইকোনমি ভারতের ইকোনমির সাথে তুলনা করা হয়। অথচ একসময়ে বাংলাদেশকে বলা হতো পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই দরিদ্র বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে নিয়ে গেছেন। এটা কি তাদের কষ্ট। এই বাংলাদেশকে এইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা। বাংলাদেশের মানুষের যে সাহস এগিয়ে যাওয়ার সাহস, সেই সাহস মনোবলের উপর যে আঘাত সেই আঘাতটা আমরা কতটুকু সামলে এগিয়ে নিতে পারবো জানি না।