এবার আবেদ আলীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন ছেলে সিয়াম

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৫:৪৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি বিসিএস পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে পিএসসির সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের নায়ক সৈয়দ আবেদ আলী জীবনকে নিয়ে ব্যাপক তোলপাড়সহ আস্থার এ সরকারী সংস্থাটি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। সেই পিএসসির সাবেক পরিচালকের গাড়িচালক আবেদ আলী মাত্র ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে এসেছিলেন। প্রথমে ঢাকায় এসে কুলির কাজ করতেন । একপর্যায়ে তিনি ড্রাইভিং শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। এরপর আবেদ আলীকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে বিপুল সম্পদ অর্জনসহ ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন তিনি ।
তার সম্পর্কে স্থানীয়রা জানায়, সৈয়দ আবেদ আলী জীবন মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বেতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজো। রহমান মীরের বড় ছেলে জাবেদ আলী কৃষি কাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনও এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের সেই আলোচিত ভাই আবেদ আলী এলাকায় মানুষের কাছে নিজের পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে।
আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়িতে চড়ে বেড়াতেন। এলাকায় কেউ জানতই না যে তিনি ড্রাইভারের চাকরি করতেন। তিনি ঢাকাতে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা করতেন বলেই এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর থেকে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাত করতেন তিনি। বিত্ত-বৈভব ফুলে ফেঁপে উঠার সঙ্গে সঙ্গে মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার করেন।
আবেদ আলী জীবনের উত্থান নিয়ে তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম সম্প্রতি একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি তার বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে তিনি তার ব্যবসা শুরু করেন। এখন তিনি একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন- এমন দাবি করেন আবেদ আলী জীবনের ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।
তবে সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে বিপিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই সৈয়দ আবেদ আলী জীবন গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের গল্প সিনেমাকেও হার মানাবে। রহস্যেঘেরা সৈয়দ আবেদ আলী জীবন গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। চেয়েছিলেন ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে।
রাজনীতির মাঠে-ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। এলাকায় দান-খয়রাত করতেন বাবা-ছেলে দু’হাত ভরে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবন তার গ্রামের বাড়িতে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এছাড়াও তিনি রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা দখল করে গরুর খামার করেছেন ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামের কিনেছেন বিপুল সম্পদ। স্থানীয়রা জানান, ঢাকায়ও তার একাধিক বাড়ি রয়েছে।
সামান্য একজন ড্রাইভার থেকে হঠাৎ করে এমন বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ায় তার সম্পর্কে জানার কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সৈয়দ আবেদ আলী জীবন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক। কিন্তু এলাকার মানুষ জানতই না। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনকে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। তারপর পড়েছেন দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। নিজেদের প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তোলেন বাবা ছেলে দু’জনে। সেই ছবি ফেসবুকে বুস্ট করে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। এর মধ্যে আসে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য।
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সেই অভিযুক্ত কর্মচারীদের একজন পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। তাদের গ্রামের বাড়ি সরজমিনে গিয়ে দেখা গেল বাড়িটি তালাবদ্ধ। তবে এলাকাবাসীর দাবি দুর্নীতি ছাড়া এত অল্প সময়ে এত টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। আসলেই সে যদি প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে তার বিচারের দাবি জানান তারা।
দুর্নীতি দমন কমিশনের মাদারীপুর সমন্বিত কার্যালয়ের সরকারি পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করব।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা এটি সরকারি বিভিন্ন এজেন্সির কাছে প্রেরণ করেছি। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরবর্তী রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।