কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চের বিবৃতি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:১২ এএম

প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ। ছবি : সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে জারি করা প্রজ্ঞাপনকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ। প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাদের আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে মনে করছেন তারা। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয়ক এলিয়ান কাফী প্রতীক স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আপনারা জানেন গত ৩ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার এবং আমাদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সারাদেশে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমাদের অনেক শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন। তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনের দাবির মুখে ২৩ জুলাই প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আমাদের আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে। এই কোটা সংস্কারের সঙ্গে আমাদের আরো কিছু যৌক্তিক বক্তব্য রয়েছে।
এসব বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে- ছাত্রদের মূল আন্দোলন কোটা সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে। এতে আন্দোলনকারীদের প্রত্যাশাপূরণ হয়েছে বলে আমরা মনে করি; সাধারণ ছাত্ররা জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা এবং ধ্বংসাত্মক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এটা সমর্থন করে না। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই; এই আন্দোলনকালীন সময়ে অনেক নিরীহ শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রন্ত হয়েছে, নিহত ও আহত হয়েছে।
আরো পড়ুন : শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৮ বার্তা
যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করেছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি এবং আহতদের সুচিকিৎসা এবং নিহত ছাত্রদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি; বিগত ২৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধান এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তার দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে; অনতিবিলম্বে সারাদেশে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিতে হবে; সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা অহিংস আন্দোলন করেছে তারা যেন হয়রানির শিকার না হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি; এ ব্যাপারে আমরা সরকারের পরবর্তী ইতিবাচক পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। পরে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়।
পরে ২৩ জুলাই কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর হবে।
এর আগে, ২১ জুলাই কোটা পুনর্বহাল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কোটাপ্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।