থানার রহস্যজনক আচরণে মামলার তদন্ত নিয়ে সংশয়

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর গ্রিন রোডের কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ভুল চিকিৎসায় মো. সামসুদ্দোহা শিমুল (৪৮) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার নাকের অপারেশনের সময় মারা যান তিনি। পরে এ ঘটনায় ডায়াগনস্টিকটির চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহীর আল আমিন ও ডা. ইফতেখারুল কাওছারকে ধরে পুলিশে দেয়া হয়। এ ঘটনায় মৃতের ভাগিনার করা মামলায় ওই দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন। তবে মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন, মামলা দায়েরের সময় থেকে রহস্যজনক আচরণ করছে থানা পুলিশ।
অপারেশনের সময় চিকিৎসকের মদ্যপ থাকা ছাড়াও আসামিদের অপরাধের যেসব প্রমাণ রয়েছে এবং অতীতেও ভুল চিকিৎসার উদাহরণ রয়েছে- সেগুলোর ভিত্তিতে পুলিশ আশ্বাস দেয়, আসামিদের রিমান্ড চাওয়া হবে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো রিমান্ড চাওয়া হয়নি। ফলে আসামিরা সহজেই জামিন পেয়ে গেছেন। শুরু থেকে রহস্যজনক আচরণ ও রিমান্ড না চাওয়ায় থানা পুলিশের মাধ্যমে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হচ্ছে। দ্রুত মামলা অন্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী। যদিও রিমান্ড না চাওয়ার বিষয়ে থানা পুলিশ বলছে, পরবর্তী সময়ে রিমান্ড চাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
মামলার বাদী মো. রিয়াজ ইসলাম বলেন, গত ১২ আগস্ট আমার মামা মৃত সামসুদ্দোহা শিমুল নাকের সমস্যার জন্য ওই ডায়াগনস্টিকে গিয়ে অধ্যাপক ডা. জাহীর আল আমিনকে দেখান। ওই চিকিৎসক আমার মামাকে জানান, ‘নাকের হাড় সামান্য বেড়েছে, বড় কোনো সমস্যা নয়, ছোট একটা অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে’। পরে ডা. জাহীর আল আমিনের পরামর্শ মতো সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখানো হয়। তখন ডা. জাহীর আল আমিন বলেন, সব রিপোর্ট ভালো আছে, সুবিধামতো ভর্তি হন। তারই পরামর্শে গত ২০ আগস্ট মামাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওইদিন রাতেই অপারেশন থিয়েটারে (ওটিতে) নেয়া হয়। ওটিতে নেয়ার আধাঘণ্টা পর আমাদের ছোট ছোট কয়েকটা হাড়ের টুকরো দেখিয়ে বলা হয় অপারেশন শেষ। কিন্তু ওটি থেকে মামাকে বের না করে তারা রহস্যজনক আচরণ শুরু করেন এবং হাসপাতাল ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। এতে সন্দেহ হলে ভেতরে গিয়ে দেখি মামার নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে, শ্বাস বন্ধ। পরে তারা জানায়- রোগী মারা গেছে। এ সময় ডা. জাহীর আল আমিনের মুখ দিয়ে মদের গন্ধ আসছিল। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ওই দুজন চিকিৎসক কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় আমরা থানায় ফোন দিয়ে তাদের হস্তান্তর করি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আগেও ভুল চিকিৎসা করে এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন তিনি। এ রকম মদ্যপ শারীরিকভাবে অযোগ্য ব্যক্তিদের চিকিৎসার সুযোগ দেয়ায় চেয়ারম্যান কবির আহামেদ ভূঁইয়া ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামিয়া ইসলামও দায় এড়াতে পারেন না। এজন্য দুই চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরের নামে মামলা দায়ের করি।
কিন্তু পুলিশ শুরু থেকে রহস্যজনক আচরণ করে যাচ্ছে। রিমান্ড না চাওয়ায় দুই আসামি সহজেই জামিন পেয়ে গেছেন। দ্রুতই আমরা মামলাটি অন্য সংস্থার মাধ্যমে তদন্তের আবেদন করব।
কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ মাহফুজুল কবির বলেন, আসামিদের গতকাল আদালতে তোলার পর রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। তবে বিচারকের কাছে পেশ করা কাগজপত্রে উল্লেখ ছিল পরবর্তী সময়ে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। আসামিদের জামিন হয়েছে। এটা আদালতের বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।