পরিচয় নির্ধারণে হাইকোর্টে মেয়ের রিট
হারিছ চৌধুরীর লাশ তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

হারিছ চৌধুরী
সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে ‘মাহমুদুর রহমান’ নামে কবর দেয়া আবুল ‘হারিছ চৌধুরী’র পরিচয় নির্ধারণে লাশ তুলে ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সিআইডির পরিচালকের প্রতি এ আদেশ দেয়া হয়েছে। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ রানজীব ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
রুলে সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে কবর দেয়া আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে লাশ তুলে ডিএনএ টেস্ট করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর আবুল হারিছ চৌধুরীর নামে ডেথ সার্টিফিকেট কেন ইস্যু করা হবে না, তার নামে থাকা ইন্টারপোল রেড নোটিস কেন প্রত্যাহার করা হবে না, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিয়ে কেন কবরস্থ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু), সিআইডির পরিচালক, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা হারিছ চৌধুরীর লাশ ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের জালালাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী সরকার ও তাদের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। এটা নিয়ে যেন কখনো প্রশ্ন না ওঠে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য এ রিট করেছি। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে, সন্তান হিসেবে এটা খুব মর্মান্তিক ও কষ্টদায়ক। এখনো মানুষ জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি মারা গেছেন? আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী আত্মগোপনে চলে যান। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি হয়। পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজা হয় হারিছ চৌধুরীর। একই বছর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হারিছ চৌধুরীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। বর্তমানে সেই মামলা বিচারাধীন।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর খবর জানাজানি হয়। ওই সময় সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল কাহের জানিয়েছিলেন, অন্তত তিন মাস আগে ঢাকায় মারা যান হারিছ। পারিবারিকভাবেই এ তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। হারিছ চৌধুরীকে ঢাকাতেই দাফন করা হয় বলেও ওই সময় জানান কাহের। তবে কোথায় দাফন করা হয় তা তিনি বলতে পারেননি। তবে হারিছ চৌধুরী বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন সে বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।