‘সেক্রেটারিয়েট ক্যু’ নিয়ে যা বলছেন কর্মকর্তারা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পিএম

সচিবালয়ে ক্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছবি : সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর সম্প্রতি সরকারি আমলাদের বিষয়ে করা একটি মন্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। গত রবিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাসপূর্তির দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে হাসনাত অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে তার ‘অনুগত লোকেরা’ নানান সমস্যা সৃষ্টি করে নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, প্রত্যেকদিন সিচ্যুয়েশন ডেভেলপ করে, প্রত্যেকদিন...এখন নেক্সট উইকে যে ক্যু-টা হতে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে সেক্রেটারিয়েট ক্যু।
তার এই বক্তব্যের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে একদিকে যেমন ‘সচিবালয়ে ক্যু’ নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তেমনি কেউ কেউ প্রতিক্রিয়াও দেখাচ্ছেন। ‘স্বৈরাচারের দোসরদের’ প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনে ফের রাজপথে নামবেন বলেও জানাচ্ছেন অনেকে।
এদিকে, দায়িত্ব নেয়ার একমাস পরেও প্রশাসনিক কাজে খুব একটা গতি ফেরেনি বলে জানাচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। তাহলে কি সত্যিই অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে প্রশাসনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে? সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে তথ্য।
সরকারি কাজে গতি আনতে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরো রদবদল প্রয়োজন বলে মনে করছেন প্রশাসনিক ক্যাডারদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনে’র (বিএএস) আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব ড. মো. আনোয়ার উল্ল্যাহ। তবে আমলাদের ক্যু’র যে আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটি ঘটনার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, কাজে গতি ফেরাতে আরো রদবদল ও সংস্কার করা প্রয়োজন। তবে ক্যু হওয়ার মতো পরিস্থিতি আমরা দেখছি না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধা পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করছে না বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি স্বীকার করছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আগের সরকারের সময়ে যারা অনিয়ম ও অনৈতিকভাবে সুবিধা নিয়েছেন, বিভিন্ন পদে বসেছেন, তারাই মূলত এখন সরকারকে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। এর বাইরেও কিছু কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এর মধ্যে একটি গ্রুপ হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিরা। অর্থলোভ ছাড়াও ধরা পড়া ও শাস্তির ভয়ে অনেকে ঠিকমতো কাজ করছেন না বলে জানান আমলাদের এই নেতা। এছাড়া কয়েক মাসের মধ্যেই যারা অবসরে চলে যাবেন, তাদের মধ্যেও কেউ কেউ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন : ডিসি নিয়োগ নিয়ে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের হাতাহাতি
আনোয়ার উল্ল্যাহ বলেন, কাজেই এসব মানুষকে চিহ্নিত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অভিজ্ঞ সৎ, নিষ্ঠাবান, দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া গেলে সাধারণ মানুষ সুফল ভোগ করবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ, নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব করে গড়ে তোলাসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
আনোয়ার উল্ল্যাহ আরো বলেন, এখন যেহেতু একটি নিরপেক্ষ সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, সেজন্য আমরা মনে করি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করার এটাই উপযুক্ত সময়। তাহলে কেউ অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
অভ্যন্তরীণ সমস্যার বাইরে ‘মব বা উচ্ছৃঙ্খল জনতা’র নানান কর্মকাণ্ডও সরকারি কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন সরকারের অতিরিক্ত এই সচিব।