স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে কত শ্রমিক নিহত, জানালো জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে ২০০ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটি জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার পতন আন্দোলনে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা দুইশ এর বেশি। এর মধ্যে পোষাক নিহত হয় ১১ জন।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় পোশাক শ্রমিকদের এই সংগঠন। এসময় সব শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সংগঠনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে মজুরি বৃদ্ধি, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, নিয়োগে নারী-পুরুষ বৈষম্য, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া-সহ বিভিন্ন দাবিতে আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, চন্দ্রা, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিকেরা আন্দোলন করছে। কোথাও কোথাও কারখানা ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বহিরাগতরা শিল্পাঞ্চল এলাকায় শ্রমিক আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
সংগঠনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন গার্মেন্ট শ্রমিকদের ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন: মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক, যেসব আলোচনা হলো
তিনি আরো বলেন, ৫ আগস্টকে শুধু ছাত্র গণঅভ্যুত্থান না বলে ছাত্র-শ্রমিক গণঅভ্যুত্থান হিসাবে উল্লেখ করতে চাই। তাদের আত্মত্যাগকে আমরা কখনো ভুলব না। সেই সঙ্গে পূর্ববর্তী স্বৈরাচারী সরকারের সব অমানবিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।
শ্রমিক ফেডারেশনের দাবিগুলো হলো-
১. অবিলম্বে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের আট সদস্য সহ ১১ জন গার্মেন্টস শ্রমিক ও সকল শ্রমিক হত্যার বিচার, দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সব শ্রমিক পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ফেডারেশনের আহত ৫০ সদস্যসহ সব আহত শ্রমিকের প্রয়োজনীয় এবং উচ্চতর চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. গত মজুরি আন্দোলনে ২০ হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকের নামে দায়ের করা ৪৩টি-সহ শ্রমিকদের নামে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. প্রত্যেক কারখানায় সাত কর্ম দিবসের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
৬. যেসব কারখানার শ্রমিকেরা ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. বেআইনিভাবে তৈরি করা শ্রমিকদের ব্লাক লিস্ট (কালো তালিকা) বন্ধ করতে হবে। এর আগে করা ব্লাক লিস্ট তালিকা বাতিল করতে হবে।
৮. গার্মেন্ট শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বহিরাগতদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৯. শ্রমিক সংগঠনগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সব বাধা দূর করতে হবে।
১০. কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হবে।
১১. ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং পরিচালনায় সব বাধা দূর করতে হবে।
১২. ৪২ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের জন্য অবিলম্বে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
১৩. কোনো কারখানায় অসন্তোষ দেখা দিলে শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১৪. দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রম আদালতের মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে।
১৫. আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালাকে সংস্কার করতে হবে।