পোড়া লাশ দাফনের পর জানা গেল রিফাত বেঁচে আছেন, অতপর...

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের খবর শুনে বিজয় মিছিলে যোগ দিতে বের হন মো. রিফাত হোসেন (১৯)। সেদিনের পর তিনি আর সাভারের আশুলিয়ার বাসায় ফেরেননি। তার বাবা লুৎফর প্রামাণিক ও মা পারুল বেগম ছেলের খোঁজে হাসপাতাল-ক্লিনিক ঘুরে হতাশ হয়ে পড়েন।
একদিন পর, লুৎফর যখন আশুলিয়া থানার সামনে স্তূপ করে রাখা পোড়া লাশের কাছে যান, তখন একটি লাশ দেখে মনে হয়, সেটাই তার ছেলে রিফাত। আবেগে ভেসে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে লাশটি বগুড়ায় নিয়ে যান এবং সেখানে দাফন করেন। কিন্তু কেবল কয়েকদিন পর জানা যায়, রিফাত বেচে আছেন!
আনন্দের সাগরে ভাসতে থাকা লুৎফর বলেন, ভেবেছিলাম, অন্তত ছেলের লাশটা পেয়েছি। কিন্তু যখন জানতে পারলাম, সে বেচে আছে, তখন কষ্ট ও আনন্দ একসঙ্গে ভেসে উঠল। তবে ছেলে বেচে থাকলেও তার মাথায় গুলি লাগায় স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।
রিফাত এখন একটি রুমের বিছানায় বসে আছেন, যেখানে বিছানার চাদরের ওপর কাঁথা ভাঁজ করা। তার মা বলেন, ছেলের মুখে আবার মা ডাক শুনছি, কিন্তু সে আর আগের মতো নেই।
রিফাত এখন এক রুমের বাসায় বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছেন। মা-বাবা জানান, তিনি একা হাঁটতে পারেন না, প্রস্রাব-পায়খানার জন্যও টয়লেটে যেতে পারেন না। মাঝে মাঝে কান্নাকাটি করেন এবং কখনও মা-বাবাকে চিনতে পারেন, আবার কখনো ভুলে যান।
রিফাত গত বছরের দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৬৯ পেয়ে ছিলেন এবং আশুলিয়ার দারুল ইসলাম ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তবে, ৫ আগস্টের সেই মিছিলে যোগ দিতে গিয়ে রিফাতের জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়।
রিফাতের বাবা বলেন, আমার ছেলে তো এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইছিল। ভবিষ্যতে কোনো কাজ করতে পারব কি না, তা জানি না। তাই সরকারের কাছে একটু সহযোগিতা চাই।
রিফাতের চিকিৎসার জন্য এনাম মেডিকেল কলেজ ও ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খরচ নেয়নি, কিন্তু এখন তাঁর ওষুধ, পুষ্টিকর খাবার, মাদ্রাসায় পড়াশোনা, বাড়িভাড়া ইত্যাদি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাবা-মা।
আরো পড়ুন: ভোলায় আরো সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকার গ্যাসের সন্ধান
স্থানীয় রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের তরুণেরা তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, কিন্তু তাঁরা সরকারের কাছ থেকে সহায়তা চান। তাঁদের আশা, ছেলে রিফাতের চিকিৎসা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য সরকার সহযোগিতার হাত বাড়াবে।