ঢাবির হলে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মামলা

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে কয়েকদফা মারধর করে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় অভিযোগটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ।
পরে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে শাহবাগ থানা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম সাহাবুদ্দিন শাহীন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এজাহার দিয়েছেন। এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে মোহাম্মদ আমানুল্লাহ উল্লেখ করেন, গত ১৮-০৯-২০২৪ইং তারিখ রাত্র ০৭.৪৫ ঘটিকার সময় একজন যুবক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের গেইটে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করিতে থাকিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু ছাত্র তাকে আটক করে প্রথমে ফজলুল হক মুসলিম হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়া সে মোবাইল চুরি করিয়াছে বলিয়া এলোপাথারী চর থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারে। তাকে জিজ্ঞাসা করলে তার নাম- তোফাজ্জল বলিয়া জানায়। পরবর্তীতে সে মানসিক রোগী বুঝতে পেরে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবর খাইয়ে তাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের দক্ষিণ ভবনে গেস্ট রুমে নিয়ে জানালার সঙ্গে পিছনে হাত বেধে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক ও লাঠিদ্বারা উচ্ছৃঙ্খল কিছু ছাত্র বেধরক মারধর করিলে সে অচেতন হইয়া পরে। তাহার এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষককে জানাইলে তাদের সহায়তায় অচেতন যুবককে ধরাধরি করিয়া মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে উক্ত যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়া গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়া ১৯-০৯-২০২৪ইং তারিখ রাত্র ০০.৪৫ ঘটিকার সময় তাকে মৃত বলিয়া ঘোষণা করে। যাহার রেজিঃ নং- ১৩৮৯/২৪২৫৯। উক্ত ঘটনার বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনা করিয়া অত্র এজাহার দায়ের করিতে সামান্য বিলম্ব হয়।
আরো পড়ুন: পুলিশকে জনবান্ধব ফোর্সে রূপান্তরের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
এর আগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে আটটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে একজনকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠে হলটির কিছু শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
পরে এই ঘটনায় তদন্ত করার জন্য ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আলমগীর কবীরকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম খান, অধ্যাপক ড. শেখ জহির রায়হান, মো. মাহাবুব আলম, ড. আছিব আহমেদ, সহকারী আবাসিক শিক্ষক ড. এম এম তৌহিদল ইসলাম ও বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী প্রক্টর একেএম নূর আলম সিদ্দিকী।
চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবককে মারধর করে মেরে ফেলার ঘটনায় জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি আরো বলেন, যুবক মারধরের ঘটনায় জড়িতদের শৃঙ্খলা কমিটি দায়ীদের শাস্তি দেবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিভিন্ন ব্যানারে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায়। চোর সন্দেহে বুধবার তাকে হলের প্রধান ভবনের অতিথি কক্ষে ও বর্ধিত ভবনের অতিথি কক্ষে কয়েক দফা পেটানো হয়। পরে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত বারোটা পয়তাল্লিশ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুদ্দিন আহমেদ।