আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে সময়ের প্রয়োজন: সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি: সংগৃহত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করতে দেড় বা দুই বছর যথেষ্ট সময় নয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং ধৈর্যের সঙ্গে এ যাত্রা শুরু করা প্রয়োজন। শনিবার (২১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘দুঃসময়ের কণ্ঠস্বর: তাদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই না, চিন্তার স্বাধীনতাও চাই। সবচেয়ে বড় স্বাধীনতা হলো আমি ন্যায়বিচার পাব—এমন একটি সমাজ চাই যেখানে সময়মতো বিচার নিশ্চিত হবে। আমাদের সামনে যে সুযোগ এসেছে, তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে।’
এসময় রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘একটি ফ্যাসিস্ট রেজিম একা একা ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে না। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও তারা দলে টানে। বুদ্ধিজীবীদের সহায়তা নিয়ে একটি ফ্যাসিস্ট শাসন কাঠামো গড়ে ওঠে। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে ফ্যাসিবাদের প্রভাব বিদ্যমান। এই প্রভাব রাতারাতি সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।’
রাষ্ট্র সংস্কারের চ্যালেঞ্জ
রাষ্ট্র সংস্কারের প্রসঙ্গে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমার এই বক্তব্যকে সরকারের মতামত হিসেবে নেবেন না, এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত। যদি আমরা পুলিশ প্রশাসনে সংস্কার করি, প্রস্তাব পাস হয় এবং আমরা সবাই একমত হই, তাহলে বাস্তবায়ন করবে কারা? যারা বাস্তবায়ন করবে, তাদের বেশিরভাগই তো সেই পুরনো ব্যবস্থার অংশ। তাদের মধ্যে কেউ হয়তো ফ্যাসিবাদের দোসর, কিন্তু যারা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে, তারা কি মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারবে?’
তিনি তিনি বলেন, ‘বিগত দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সমাজে ফ্যাসিবাদের প্রভাব পড়েছে এবং তা আমাদের চিন্তা-চেতনায় ঢুকে গেছে। আমরা হয়তো আইন ও বিধি প্রণয়ন করতে পারব, কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি বাস্তবে সেই সংস্কারের যথাযথ প্রয়োগ করতে পারব? আজও যদি বিদ্যমান আইনগুলো জনস্বার্থে প্রয়োগ করা হতো, তাহলে হয়তো এত অসহায় অবস্থায় পড়তে হতো না।’
সমাজের মূল চ্যালেঞ্জ
বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের সমাজের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো—ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাধীনতা, পেশাগত স্বাধীনতা, এবং রাষ্ট্রের স্তরে স্বাধীনতা অর্জন। আজকে আমরা কথা বলতে পারছি, কিন্তু একসময় তা সম্ভব ছিল না। আমার স্বপ্ন হলো—এমন একটি সমাজ যেখানে ব্যক্তি এবং রাষ্ট্র উভয় পর্যায়েই স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।’
গোলটেবিল বৈঠকের অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য
’দুঃসময়ের কণ্ঠস্বর: তাদের স্বপ্ন ও বাস্তবতা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আরো বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা এখনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছি। নানা ধরনের অপপ্রচার, বিভাজন এবং অবিচার চলছে। আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে একে অন্যকে টেনে নামানোর রাজনীতি বন্ধ করে দেশের কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। আমাদের সকলের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ক্ষমতা রয়েছে এবং সেই ক্ষমতার অপব্যবহার না করে তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।’
আরো পড়ুন: ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়ে যা বললেন আইসিটি উপদেষ্টা
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, এশিয়া ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।