তথ্য কমিশনকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান ড. ইফতেখারুজ্জামানের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ পিএম

ড. ইফতেখারুজ্জামান
তথ্য কমিশনকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি তথ্য অধিকার আইনের সংশোধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তথ্য কমিশনের জনবল বৃদ্ধি করে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তথ্য কমিশনের অডিটোরিয়ামে ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘রাষ্ট্রের মূলধারায় তথ্য অধিকারের সংযুক্তি এবং সরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ।’আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তথ্য কমিশনের পরিচালক এস এম কামরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তবে তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি।
তথ্য কমিশন দলীয় ক্যাডার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০০৯ সালে যখন তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়, তখন সেটাকে একটা অর্জন হিসেবেই গণ্য করা হচ্ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল এ অর্জন কেবলই কাগজে-কলমে, তার প্রাপ্তিটা সরাসরি পাওয়া যায়নি। বিশাল এক জনগোষ্ঠী এ আইনের ব্যবহার ও উপযোগিতা সম্পর্কে অবহিত ছিল না।
তিনি বলেন, তথ্য চাইতে গেলে একজন মানুষকে কেন মামলা-হামলার শিকার হতে হবে। কারণ হচ্ছে, এ আমলাতন্ত্রের মধ্যে এখনও ব্রিটিশ শাসনামলের মতো এক গোপনীয়তা কাজ করে। কর্মকর্তারা মনে করেন তথ্যের মালিক কেবল তিনিই, অথচ তথ্যের মালিক কিন্তু জনগণ। তথ্য কমিশন দলীয় ক্যাডার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। কমিশনের শীর্ষ নেতারা ছিলেন দলীয় ক্যাডার। এ অবস্থার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, নতুন বাংলাদেশে আমরা সেই প্রত্যাশা করি।
টিআইবি পরিচালক আরো বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয়, বাংলাদেশে কমিশন শব্দ যতগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, তার সবগুলো প্রতিষ্ঠান আমাদের অবসরপ্রাপ্ত দলীয় প্রভাবে প্রভাবিত ব্যক্তিদের রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে পরিণত হয়েছে। যে কারণে আমরা কাগজে-কলমে অনেক কিছুই পেয়েছি, কিন্তু বাস্তবে দুর্নীতি দমন কমিশন হোক, নির্বাচন কমিশন হোক, মানবাধিকার কমিশন কিংবা অন্যান্য কমিশন হোক, আইন অনুযায়ী তাদের সত্যিকারের ভূমিকা পালন করতে এখনো তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
দেশের তথ্য অধিকার আইনে বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আইনে অনেক দুর্বলতা আছে, যে কারণে আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো, সরকারি উদ্যোগে, সংশ্লিষ্ট অংশীজনকে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত করে তথ্য অধিকার ফোরাম একটি সংস্থা আছে, তাদের নেতৃত্বে গণমাধ্যমসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করে, যেই স্বপ্ন থেকে এ আইন করা হয়েছিল, সেটা যেন নিশ্চিত করা হয়।
আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইন প্রণীত হয়েছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, আইনের শাসন এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করে, একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম হাতিয়ার হলো তথ্য অধিকার আইন।
তিনি আরো বলেন, তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি তথ্য কমিশনের সংস্কার করে তথ্য অধিকার আইনকে জনকল্যাণে ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম। আলোচনা সভায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাপ্রধান ও প্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।