সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানাই: নৌ উপদেষ্টা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সব বিদেশি প্রস্তাবকে বর্তমান সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব ক্ষেত্রেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানাই। দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও বস্ত্র কলগুলোতেও বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে সচিবালয়ের দপ্তরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূৎ আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদির সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন। সংযুক্ত আরব আমিরাত চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ইউএই রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদির নেতৃত্বে বৈঠকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করে। এ সময়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্বে) সঞ্জয় কুমার বণিক, নৌপরিবহন অধিদপ্তরে মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের এ বিনিয়োগ প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সব সময় বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে বহুমাত্রিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা চট্টগ্রাম বন্দরসহ অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানাই। আমি মনে করি এর মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক সব বিদেশি প্রস্তাবকে বর্তমান সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করবে। তিনি আমিরাতের রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশী নাবিকদের জন্য দুবাইয়ের ভিসা জটিলতা দূরীকরণের মাধ্যমে সহজে ট্রানজিট ভিসা ইস্যু করার আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন: সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি দূরীকরার মাধ্যমে বাণিজ্য ভারসাম্য দূর করতে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি পাটজাত পণ্য আমদানির আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সোনালী আঁশ পাট বাঙালির ঐতিহ্য। এটি সহজে পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব। আমরা পাটের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে ২৮২ ধরণের পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে- যা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। পরিবেশ দূষণরোধে পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারে কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দেশের সুপার শপগুলোতে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুবাইয়ের সুপারশপগুলোতেও পরিবেশের ক্ষতিকর দ্রব্যগুলো ব্যবহারে বিধি নিষেধ রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ইউএই সরকার বাংলাদেশ থেকে অত্যন্ত মানসম্মত ও বৈচিত্রপূর্ণ পাটজাত দ্রব্য আমদানি করতে পারে।
উপদেষ্টা বাংলাদেশের পাট ও বস্ত্র শিল্পে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পলিথিন ও প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে সারাবিশ্বেই পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও বস্ত্র কল গুলোতেও বিদেশি বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমি আশা করবো সংযুক্ত আরব আমিরাতও বাংলাদেশের পাট ও বস্ত্র শিল্পে বিনিয়োগ করবে।
আরো পড়ুন: দেশের নোংরা রাজনীতি থেকে বের হতে চায় শিশুরা: উপদেষ্টা শারমিন
আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আব্দুল্লাহ আলী আব্দুল্লাহ খাসিফ আল হামুদি উপদেষ্টার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশী নাবিকদের জন্য এখন থেকে সহজ উপায়ে ট্রানজিট ভিসা দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিনিয়োগ করতে চায়। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ডিপি (দুবাই পোর্ট) ওয়ার্ল্ড বর্তমানে ছয় মহাদেশজুড়ে ৬০টির বেশি সমুদ্রবন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া ১০টি দেশে তাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত ও নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। আমাদের লন্ডন গেটওয়ে পোর্ট নির্মাণের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায়ও ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বিশ্বাস করে, বাংলাদেশেও বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরে বিনিয়োগের মাধ্যমে উভয় দেশই উপকৃত হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্ধু রাষ্ট্র। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে পোশাক, কৃষিজাত পণ্য, নিটওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে আসছে। এই ধারাবাহিকতায় সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে পূর্ণ উদ্যমে আরো বৃহৎ পরিসরে নতুনভাবে কাজ করতে আগ্রহী। এর ফলে উভয় দেশের জনগণই উপকৃত হবে। রাষ্ট্রদূত উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেকোনো বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে লিখিত প্রস্তাবনা দিতে অনুরোধ জানান।