সারাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সংকট

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। গত ১ বছর ধরে সৃষ্ট এ সমস্যা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে জনসংখ্যাবহুল এই দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে। এ কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অযোগ্য ও সাবেক সরকারের দলবাজ কতিপয় কর্মকর্তার অদক্ষতার কারণেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ ১১টি দাতা সংস্থার বিনিয়োগে চলা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সক্ষম দম্পতিরা বেসরকারি খাত থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণের সামগ্রী বেশি সংগ্রহ করেন। সরকারের কাছ থেকে সামগ্রী নেয় মূলত সমাজের দরিদ্র শ্রেণি। তারাই এখন প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পাচ্ছেন না। মাঠপর্যায়ে এসব সামগ্রীর অভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ড ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বর্তমানে দেশের ১০৫টি উপজেলায় কনডম সংকট রয়েছে। খাওয়ার বড়ি নেই ৪৪৫টি উপজেলায়। এই দুটি সামগ্রী দেশের জন্মনিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
আরো জানা গেছে, কনডম, খাওয়ার বড়ি, আইইউডি, ইনজেক্টেবলস ও ইমপ্ল্যান্টসহ মাঠকর্মীরা সাধারণত ৫ ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী দম্পতিদের মাঝে বিলি করে থাকেন। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কনডম ও বড়ি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের দেয়া হিসাবে প্রতি মাসে মাঠকর্মীরা ৫০ লাখ ৩৫ হাজার কনডম ও ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার সাইকেল বড়ি দম্পতিদের কাছে পৌঁছে দেন।
সার্বিকভাবে অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ৪৯৩টি উপজেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর তথ্য প্রতিদিন হালনাগাদ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, ১০৫টি উপজেলায় কনডমের মজুত শূন্য। এছাড়াও ১৯১টি উপজেলায় এ উপকরণের মজুত শূন্য হতে যাচ্ছে। ৮৩টি উপজেলায় মজুত যা থাকার কথা তেমনটা নেই। কনডমের সন্তোষজনক মজুত আছে ৭২টি উপজেলায় ও অতিরিক্ত মজুত আছে ৪২টি উপজেলায়। দেশজুড়ে খাওয়ার বড়ির পরিস্থিতি আরো নাজুক। ৪৪৫টি উপজেলায় মাঠকর্মীদের কাছে নারীদের হাতে দেয়ার মতো বড়ি নেই।
৪০টি উপজেলার বড়ি শেষ হয়ে যাবে শিগগিরই। প্রয়োজনের চেয়ে কম বড়ি মজুত আছে দুটি উপজেলায়। সন্তোষজনক পরিমাণ বড়ি আছে ৬টি উপজেলায়। অতিরিক্ত বড়ি কোনো উপজেলায় নেই। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সামগ্রী হিসেবে তৃতীয় স্থানে আছে ইনজেক্টেবল। মাসে ৬ লাখ ৮০ হাজারের বেশি ইনজেক্টেবল সরকারি পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। সরকারি ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, ২৫টি উপজেলায় এই সামগ্রী একটিও নেই, ১৫৫টি উপজেলায় ইনজেক্টেবলের মজুত খুব শিগগির শেষ হয়ে যাবে ও ১৭২টি উপজেলায় প্রয়োজনের চেয়ে কম মজুত আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে হাতের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পেলে অপরিকল্পিত গর্ভধারণ বাড়বে। এছাড়াও বেড়ে যেতে পারে মাতৃ মৃত্যুর ঘটনা। এমন হলে ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার শূন্যে নামিয়ে আনার যে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রয়েছ, তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইফুল্লাহিল আজম এ প্রতিবেদককে বলেন, আগে যারা দায়িত্ব ছিলেন, তারা সংকট দূর করে যাননি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি সংকট কাটানোর। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে রাজস্ব বাজেট থেকে খরচ করার ক্ষমতা দেয়া আছে। তবে গত বছর মন্ত্রণালয় সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধা দেয়। যতবারই অধিদপ্তর উদ্যোগ নেয় ততবারই তৎকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিবের অবহেলায় থেমে যায় প্রক্রিয়া। ফলে প্রয়োজনের সময় রাজস্ব বাজেট ব্যবহার করতে পারেনি অধিদপ্তর।
অন্যদিকে উন্নয়ন বাজেট থেকে কিনতে হলে, প্রক্রিয়া শুরু করে শেষ করতে লেগে যায় কয়েক মাস। উন্নয়ন বাজেট থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কেনার জন্য এ বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৭ মার্চ দরপত্র মূল্যায়ন করা হয়। যোগ্য ও সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে দরপত্র বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এরপর বিভিন্ন পক্ষ একাধিক স্থানে অভিযোগ দেয়, হাইকোর্টে হয় মামলা। সেই জট এখনো খোলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের মোবাইলে ফোন করলেও তা রিসিভ করেননি তিনি।