সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৫ পিএম

শুক্রবার দুপুর ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের ব্যানারে আয়োজিত সমাবেশে দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষ অংশ নেন। ছবি: ভোরের কাগজ
সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে গণসমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট। শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে তিনটায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শঙ্খ বাজিয়ে ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে এই গণসমাবেশ শুরু হয়। এসময় দলে দলে বিভিন্ন সনাতনী সংগঠনের ব্যানারে শহীদ মিনারে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা।
সমাবেশে বক্তারা সারা দেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অত্যাচারের প্রতিবাদ জানান। অতি দ্রুত এসব হামলা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দৃশ্যমান পদক্ষেপেরও দাবি জানান তারা। এসময় পূর্বঘোষিত ৮ দফা দাবি না মানলে এবং দুর্গাপূজায় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তারা।
বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোটের প্রতিনিধি প্রদীপ ক্রান্তি দে বলেন, আমাদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে সেটা বন্ধ করার জন্য আমরা গত ৯ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। ক্ষমতায় বসার উদ্দেশ্য নয় উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আমরা কেবল আমাদের অধিকারের জন্য এসেছি। আমাদের ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্যই আমরা সংগ্রাম করে চলছি।

এসময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দৃষ্টি আর্কষণ করে সনাতনী অধিকার আন্দোলনের প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ কুমার হালদার বলেন, পূর্বঘোষিত ৮ দফা দাবি না মানলে এবং দুর্গাপূজায় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না করলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আরো পড়ুন: শেখ হাসিনাকে ‘সসম্মানে দেশে ফেরাতে’ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
সমাবেশে অ্যাডভোকেট সুশান্ত অধিকারী বলেন, সরকার পতনের পর থেকেই যেভাবে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা-লুটপাট শুরু হয়েছে তাতে বোঝা যায় এদেশের সংখ্যালঘুরা কতটা অনিরাপদ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার প্রয়োজন। নাহলে এই সমস্যা কখনোই নিরসন হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই, পতিত সরকার সংখ্যালঘুদের অবহেলা ও বৈষম্য সৃষ্টি করায় তাদের পরিণতি ভালো হয়নি। সুতরাং অনতিবিলম্বে বৈষম্য নিরসন করে ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।
এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত প্রামাণিক বলেন, এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে আমরা শিক্ষার্থীরা নিজেদের বাড়ি যেতে ভয় পাই, বাড়ির লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। যতদিন আমাদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হবে, অপরাধীদের শাস্তির আওতায় না আনা হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা ভয় নিয়ে থাকবো।
সমাবেশে ৮ দফা দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে আরো বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী মহাসচিব ও মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে,হিন্দু যুব মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি গৌতম হালদার প্রান্ত, নির্মল বিশ্বাস, রাজেশ নাহা, শ্রাবণী সরকার, প্রীতি মিত্র, দেবজ্যোতি বণিক সৌম্য, সুপ্রিয়া জয়ধর,সাজেন কৃষ্ণ বল, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সভাপতি ও বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের অন্যতম উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট বিধান বিহারী গোস্বামী, জিতু কর্মকর, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী, প্রফেস্ত্র চন্দন সরকার, বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের পিযুস দাস, রনি রাজবংশী, শ্রীমৎ পরিতোষানন্দ গিরি মহারাজ শংকর, কেন্দ্রীয় তপবোন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীশ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী সেবাশ্রমের শ্রীমৎ রণনাথ ব্রহ্মচারী মহারাজ প্রমুখ।

সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট ৮ দফা পেশ করে। দাবিগুলো হলো-
১. সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি প্রদান
২. ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা
৩. অনতিবিলম্বে ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করা
৪. ‘সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করা এবং জাতীয় সংসদে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন বরাদ্দ রাখা
৫. হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করার পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করা
৬. ‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন’ প্রণয়ন এবং ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন’ বাস্তবায়ন করা
৭. প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় নির্মাণ ও প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা কক্ষ বরাদ্দ করা
৮. ‘সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ আধুনিকায়ন করা এবং শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিনের সরকারী ছুটি ঘোষণা করা।