জলবায়ু অর্থায়নে আঞ্চলিক ন্যায্যতা বিবেচনায় আসেনি: সিপিআরডি’র গবেষণা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থায়ন করা হচ্ছে না বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। শনিবার (৫ অক্টোবর) ঢাকার গুলশানে সিক্স সিজন হোটেলে সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) আয়োজিত এক সেমিনারে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, দেশের খরাপ্রবণ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের সংখ্যা এবং অর্থের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। খরাপ্রবণ এলাকায় মাত্র ১৪৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, যেখানে উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে প্রকল্পের সংখ্যা ২৮১। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় জলবায়ু বাজেট থেকে মাত্র ৬৩টি প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উত্তরাঞ্চলে, যা স্পষ্টতই জলবায়ু অর্থায়নে আঞ্চলিক ন্যায্যতার ঘাটতি প্রকাশ করছে।
গবেষণাটি পরিচালিত হয় সিপিআরডি ও হেক্স/ইপিইআর-এর সহযোগিতায়। গবেষণার অংশ হিসেবে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও কুড়িগ্রামে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ৫০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ২০৯৫.৪১ কোটি টাকা। অথচ ধীরগতির দুর্যোগ, যেমন খরা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেয়া হয়নি। পাশাপাশি বরাদ্দকৃত প্রকল্পগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ যথাযথভাবে না হওয়ায় নির্মিত অবকাঠামোগুলো নতুন ঝুঁকি তৈরি করছে।
সিপিআরডি’র প্রধান নির্বাহী মো. শামছুদ্দোহা সেমিনারে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড এবং জাতীয় জলবায়ু বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয় ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের জন্য পৃথক অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন করিন হেনচোজ পিগনানি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণকেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একক কোনো সমাধান নেই, স্থানীয় সমাধানগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জন করতে হবে।
পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ বলেন, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সাবেক সংসদ সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকার সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং প্রকল্প পরিকল্পনা তৈরিতে স্থানীয় সরকারের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
আরো পড়ুন: আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অপরিকল্পিত
সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফ-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বি সাদেক আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক, সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।