‘দেশের ৭০ শতাংশ শিশুই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে’

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৭ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ শিশুই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বলে দাবি করেন শিশু অধিকার নিয়ে আন্দোলনরত আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন কচি কন্ঠের আসর। ‘বিশ্ব শিশু দিবস এবং বিশ্ব শিশু সপ্তাহ ২০২৪’ উপলক্ষে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ্জুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির বিস্তারিত জানাতে গিয়ে এ তথ্য দেন বক্তারা। শিশু একাডেমিকে জনমুখী ও প্রজন্ম বান্ধব করে তুলতে হবে এবং কমিশন গঠন করে এর কার্যক্রমে গতি আনার আহ্বান জানান হেমায়েত হোসেন।
রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় রাজধানীর বাংলামটরস্থ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শিশু-কিশোরদের নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এ আহ্বান জানান।
শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি এবং পরিবেশ উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলা এই সংগঠনটি গত সপ্তাহজুড়ে নানা কর্মসূচীর উদ্দেশ্য ও বিবরণ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তুলে ধরতে এক ব্যতিক্রমধর্মী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশকিছু শিশু সাংবাদিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের পাশাপাশি আলোচক ও আয়োজকদের কাছে নতুন আগামীর বাংলাদেশ গড়ার উপর বিভিন্ন প্রশ্ন করেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শিশু সংগঠক হেমায়েত হোসেনের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে বহু শিশু এখনো শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে বয়সে তাদের শিক্ষার জন্য স্কুলে যাওয়ার দরকার, সে বয়সে অনেকেই পরিবারের দায়িত্ব গ্রহণের মত গুরুদায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের লোকজনকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। তার দাবি, দেশের সকল শিশুকে বৈষম্যহীনভাবে তাদের অধিকার দিতে হবে।
তিনি বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, পথশিশুরা এখনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাচ্ছে না, যার ফলে চিকিৎসার মত মৈালিক অধিকারের ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল মো. কাইয়ুম খান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশেই শিশুরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। বিশেষ করে, যুদ্ধবিদ্ধস্থ দেশগুলোতে শিশুরা বহু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
এর উদাহরণ টানতে গিয়ে তিনি কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুৎথানে অনেক শিশুর আহত ও মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও ফিলিস্তিন-ইসরায়েল-ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে শিশুদের বিভিন্নভাবে নির্যাতনের কথা বিশ্ব অবগত।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এ.কে.এম. লুৎফর রহমান, সহ-সম্পাদক নুর মোহাম্মদ আব্দুল মুকিত, ট্রেজারার মোঃ আজমল আলী খান, মিডিয়া কমিউনিকেশন ও আর্ট সেক্রেটারি মোঃ সফিকুল ইসলামসহ কার্যনির্বাহী সদস্যরা।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বৈষম্যহীন শিশু অধিকার আদায়ের তাগিদ দিয়ে আন্তর্জাতিক শিশু সংগঠন ‘কচি কন্ঠের আসর’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস, জাতিসংঘের আঞ্চলিক অফিস, ইউনিসেফ ও আমেরিকার দূতাবাসে পৃথক পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে। স্মারকলিপি প্রদানের আগে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সকালে ইউনিসেফ র্যালি ও রোডমার্চ সহকারে শিশু প্রতিনিধি একটি দল তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করে।
এরপর সকাল ১১ টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে শিশুদের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এরপর দুপুরের মধ্যাহ্ন ভোজের পর জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এর আগে ওইদিনই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহত শিশুদের জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে দেশের বিভিন্ন বাংলা মিডিয়াম স্কুল, ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল, অটিষ্টিক স্কুল ও মাদ্রাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য স্কুলগুলোর হলো- ইউসেপ-ইসমাইল স্কুল, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, মাস্তুল স্কুল, কড়াইল স্লাম পথশিশু স্কুল, একাডেমিয়া, মনিপুর স্কুল (আদিবাসী ছাত্র), আল আমীন হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং ম্যাপেললিফ স্কুলসহ আরো কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গত ১ অক্টোবর সকাল ১০টায় মুকসুদপুরের সূরুপি সালিনা বকসা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৫ হাজারেরও বেশি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য পরিবেশন করা হয়। এতে স্পন্সর করে ‘কচি কন্ঠের আসর ইউএসএ’ এবং ‘চিলড্রেনস ভয়েস’। এছাড়াও সপ্তাহব্যাপী আনন্দ র্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের মাঝে উন্নতমানের খাদ্য ও পোশাক বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে।