৬ বছরে বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ
সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১২৫

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, এই অংশে ১২৫টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রতি ১০০ বর্গকিলোমিটারে বাঘের ঘনত্ব ২ দশমিক ৬৪। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে ১১টি। বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের তুলনায় ১৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে।
২০২৩-২৪ সালে সুন্দরবনের জাতীয় পশু বাঘ জরিপে এমন তথ্যই মিলেছে। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আজিজ, খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এবং প্রকল্প পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন প্রমুখ।
জরিপে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ২০২৩-২৪ সালের জরিপে ২১টি বাঘ শাবকের ছবি পাওয়া গেছে, যেখানে ২০১৫ ও ২০১৮ সালের জরিপে মাত্র ৫টি করে শাবকের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। তবে বাঘ শাবকের সংখ্যা জরিপের ফলাফলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। কারণ ছোট থেকে পূর্ণবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাঘ শাবকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি হয়ে থাকে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জরিপের ছবি ও তথ্য বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। এই কাজে ভারত, নিউজিল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেয়া হয়। জরিপটি ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হয়। জরিপে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা, খুলনা, চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে চারটি ব্লকে ৬০৫টি গ্রিডে ১ হাজার ২১০টি ক্যামেরা ৩১৮ দিন রেখে দেয়া হয়, যার মধ্যে ৩৬৮টি গ্রিডে বাঘের ছবি পাওয়া যায়। প্রায় ১০ লক্ষাধিক ছবি ও ভিডিও থেকে ৭ হাজার ২৯৭টি বাঘের ছবি পাওয়া যায়। এত বেশি সংখ্যক বাঘের ছবি এর আগে পাওয়া যায়নি। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে আধুনিক ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতির মাধ্যমে বাঘ জরিপ করা হয়। ওই জরিপে ১০৬টি বাঘের সন্ধান পাওয়া যায়।
বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির এই খবর দেশের সবার জন্য আনন্দের উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাঘের জন্য ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ বন সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, ৬০ কিমি. নাইলন ফেন্সিং, ১২টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ ও পুরস্কার দেয়া এবং ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়েছে সরকার। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বাঘ সংরক্ষণে উদ্যোগ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাঘ সংরক্ষণে সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়েছে। এর মধ্যে বাঘসহ সুন্দরবনের অন্যান্য বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও প্রজননের উদ্দেশে বনের ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে সেখান থেকে সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাঘ-মানুষের দ্ব›দ্ব হ্রাসে লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ নাইলনের ফেন্সিং তৈরি করা হচ্ছে। ঝড়-জলোচ্ছ¡াসের সময় বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আশ্রয়ের জন্য বনের ভেতরে ১২টি মাটির উচু কিল্লা/ঢিবি নির্মাণ করা হয়েছে। বাঘের আক্রমণে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৩ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহত ব্যক্তিকে ১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, বাঘ সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা সম্মানী দেয়া হচ্ছে। লোকালয়ে চলে আসা বাঘকে পুনরায় বনে ফিরিয়ে দেবার জন্য স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৪৯টি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে এবং টিমের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর বিশ্ব বাঘ দিবস পালনসহ বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পরিবেশ উপদেষ্টা।