×

জাতীয়

আ. লীগ নেতাদের পালানো নিয়ে যা জানালো র‌্যাব, বিজিবি, আইএসপিআর ও সরকার

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:২৫ পিএম

আ. লীগ নেতাদের পালানো নিয়ে যা জানালো র‌্যাব, বিজিবি, আইএসপিআর ও সরকার

ছবি: ভোরের কাগজ

   

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত ও শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার পর থেকে যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে সেটি হচ্ছে– দলটির অন্যান্য প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত পুলিশ কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা কোথায় আছেন? গত ১৮ আগস্ট সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছিল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘জীবন সংশয়ের আশঙ্কা থাকায়’ দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।

কিন্তু এসব ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে না সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে যারা ছিলেন, তারা কি দেশ ত্যাগ করেছেন নাকি দেশের ভেতরেই আছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কলকাতার একটি পার্কে বসে আছেন। শামীম ওসমানকে দিল্লিতে দেখা গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরো কিছু নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন কিংবা অন্যান্য দেশে চলে গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় আওয়ামী লীগ সরকারের যে দুজনের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন তারা হলেন – তৎকালীন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এই দুই মন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিল ছাত্ররা। আওয়ামী লীগ সরকারে যারা প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তাদের মধ্যে সালমান এফ রহমান এবং আনিসুল হক গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত অনেকেই এখনো গ্রেফতার হয়নি।

গ্রেফতার হওয়া সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন শাজাহান খান, টিপু মুন্সী, আব্দুল মান্নান, সাবের হোসেন চৌধুরী, আসাদুজ্জামান নূর, দিপু মনি, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাধন চন্দ্র মজুমদার এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা দেশ ছেড়ে গেছেন বলে বলা হচ্ছে, সেটি 'সমঝোতার মাধ্যমে' হতে পারে। তিনি বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেয়া হয়েছে। বিষয়টা আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ক্যান্টনমেন্টে কারা আশ্রয় নিয়েছিল তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা উচিত। মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ক্যান্টনমেন্ট সেনাবাহিনীর আশ্রয়ে কারা ছিলেন তাদের তালিকা আমরা জানি না। তারা তো ক্যান্টনমেন্ট থেকে এমনি এমনি চলে যায়নি। ক্যান্টনমেন্টে কেউ আশ্রয় নিতে গেলে তারা তো চাইলেই সেখান থেকে চলে আসতে পারে না। এটার জন্য একটা প্রক্রিয়া আছে।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।যেসব বাহিনী বিভিন্ন গ্রেফতার অভিযান চালাচ্ছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আটক করেছে র‌্যাব। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত শীর্ষ পর্যায় থেকে একেবারে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যাদের আটক করা হয়েছে তারা বিভিন্ন মামলার আসামি। অনেকে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে জড়িত ও সাবেক মন্ত্রীদের মধ্যে ৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজিবি বলছে, ভারতে পালিয়ে যাবার সময় বিভিন্ন সীমান্ত থেকে বিজিবি ২০ জনের বেশি ব্যক্তিকে আটক করেছে। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কিংবা আওয়ামী লীগ-পন্থী পেশাজীবী হিসেবে পরিচিত। গত ৩ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানান-এমপি, মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের সবার তালিকা দেয়া হয়েছে। এই তালিকায় কয়েকশ নাম রয়েছে।

তিনি বলেন, এই তালিকা শেষ কথা নয়। এর বাইরেও আরো ব্যক্তি রয়েছেন। বেনাপোল, ভোমরা, দর্শনা, আখাউড়া এবং সিলেটের দোনা সীমান্তে বাড়তি নজরদারি রয়েছে। ভারতের সাথে আমাদের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। যারা ভারতে পাড়ি জমিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে, তাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের সাথে অফিশিয়ালি আলোচনা করা যাবে।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার মৃতদেহ ভারতের মেঘালয়ে খুঁজে পাওয়ার পরে ওই রাজ্যের পুলিশ এখন অনেকটাই নিশ্চিত যে তাকে খুন করা হয়েছিল। তার সঙ্গে প্রায় ৩ কোটি ভারতীয় টাকার সমপরিমাণ মার্কিন ডলার পাওয়া গিয়েছিল বলে শোনা গেলেও পরবর্তীতে ভারতীয় পুলিশ বলছে এই তথ্য সঠিক নয়।

একই সীমান্ত দিয়ে আওয়ামী লীগ-পন্থী সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ভারতে পালিয়ে যাবার সময় বিজিবির হাতে ধরা পড়েন। তার কাছেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ছিল বলে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার নামে দলটির ফেসবুক পেইজে বিভিন্ন বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। এসব বিবিৃতি তারা কোথা থেকে দিচ্ছেন সে ব্যাপারে জানা যায়নি। তবে অনেক ধারণা করছেন, তারা বাংলাদেশের ভেতরে নেই।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে ভারতে পালিয়ে গেলেন? গত ৩ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এটা আমারও প্রশ্ন, উনি কোন দিক দিয়ে গেলেন? সেটা যদি কোনো তথ্য পেতাম, অবশ্যই আমরা তাকে আটক করতাম। উনি কীভাবে কোন দিক দিয়ে গেলেন সেটা একটা প্রশ্নের বিষয়, কখন গেলেন সেটাও জানি না।

র‌্যাবের তরফ থেকেও বলা হচ্ছে, আসাদুজ্জামান খানের ভারতে পালিয়ে যাবার বিষয়ে তাদের কোনো তথ্য নেই। মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, তাদের ৭২২টি বিওপি আছে। একটা বিওপি থেকে আরেকটা বিওপির দূরত্ব রয়েছে। প্রতিটি বিওপির বিজিবি সদস্যরা গড়ে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত টহল দিতে হয়। এই দূরত্বের মধ্যে স্থানীয় কোনো দালাল অর্থের বিনিময়ে কাউকে যদি সীমান্ত পার করে দিতে চায় তাহলে অনেক ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হতে পারে।

আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফলতি বা উদাসীনতা রয়েছে কী না সে প্রশ্ন উঠছে। গত ২ অক্টোবর র‌্যাবের মুখপাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এখানে উদাসীনতা বা গাফিলতি আমরা বলতে চাই না। আমাদের প্রতি যে দায়িত্ব ছিল, আমাদের যে সামর্থ্য আছে তার সবটুকু দিয়ে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের কর্ম পরিধি অনুযায়ী যতটুকু করা দরকার তর সবটুকু করে যাচ্ছি।

অন্তর্বর্তী সরকারও স্বীকার করছে যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পৃক্ত শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই দেশ পালিয়ে গেছে। গত ৫ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, যারা পালিয়ে গেছে তারা ৫ আগস্ট থেকে ৭ আগস্টের মধ্যে পালিয়ে গেছে। এই ৩ দিনে সবচেয়ে বেশি পালিয়ে গেছে। এখন পালানোটা তাদের জন্য দুরূহ হয়ে গেছে। এখন পালাইতে গেলে শুধু পুলিশ বা বিজিবি তা না, জনগণই তাদের ধরে ফেলে। কিন্তু হ্যাঁ, ৫, ৬, ৭ তারিখে অনেকে পালিয়ে গেছে। আমাদের দায়িত্ব তাদের গ্রেফতার করা, আপনাদেরও দায়িত্ব আমাদের ইনফরমেশন দেয়া। আপনারা ইনভেস্টিগেশন জার্নালিজম করেন, কাইন্ডলি আমাদের দুই-একটা ইনফরমেশন দেন। এই জন্য আপনাদের যদি কিছু খরচ হয় আমরা ঐটা বিয়ার করবো।

গত ১৮ আগস্ট সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র প্রতিষ্ঠান আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর বা আইএসপিআর জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জীবন সংশয়ের আশঙ্কা থাকায় দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিচারক ছাড়া বড় অংশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে ৬১৫ জন নিজ উদ্যোগে চলে যান।

আইএসপিআর জানিয়েছিল, যারা আশ্রয় নিয়েছিল তাদের ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন এবং ৫১ জন পরিবার-পরিজনসহ (স্ত্রী ও শিশু) ৬২৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়।

পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি সাপেক্ষে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। আশ্রয় দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ৪ জনকে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বামামলার ভিত্তিতে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App