যেভাবে সমন্বয়কদের ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়, জানালেন হারুন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
২০১১ সালে জাতীয় সংসদের সামনে এক মিছিলে তখনকার বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুককে মারধরের ঘটনায় প্রথম আলোচনায় আসেন মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ। এরপর থেকে বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে তার নাম আসে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ২ মাস পার হলেও তাকে নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে।
বিক্ষোভ দমনে পুলিশ সদস্যদের গুলি ছুঁড়তে নির্দেশ দেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনায় আছেন হারুন। কারণ, তিনি এখনো গ্রেপ্তার হননি। এছাড়া তার অবস্থান নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। গত ২৯ আগস্ট খবর পাওয়া যায়, রাজধানী উত্তরার একটি বাসায় আছেন হারুন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাসা ঘিরে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে পরে তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এ বিষয়টিও নিশ্চিত নয়।
এর মধ্যেই অজ্ঞাত স্থান থেকেই একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলে কথা বলেছেন বহুল আলোচিত-সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা। তাতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান, আন্দোলন দমনে নিজের ভূমিকাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। হারুন দাবি করেছেন-তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুর সময়ে এক প্রশ্নের জবাবে হারুন বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমেরিকা এসেছিলাম ছুটি নিয়ে। জুলাইয়ের ১৫ তারিখ দেশে ফিরি। দেশে যাওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কোর কমিটির বাসায় একটা মিটিং হয়। নিয়মিত সেই মিটিং হতো। মিটিংয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি, বিজিবি প্রধান ছিল। এছাড়া ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও এনটিএমসির প্রধান।
তিনি বলেন, সেসময় প্রতিদিন কোর কমিটির মিটিং হচ্ছিল। একদিন মিটিংয়ে আমাকে ডাকা হলো। আমার কাছে গ্রেফতারের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়। তখন আমি বলি আমার কাছে কেউ গ্রেফতার নেই। তবে র্যাব নুরুকে গ্রেফতার করে আমার কাছে দিয়েছে, নজরুল ইসলাম খানকে দিয়েছে। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে তিনজন সমন্বয়ক আছে। তাদেরকে এসবি পাহারা দিচ্ছিলো। আমাকে বলা হলো- তাদের নিরাপত্তার জন্য ডিবিতে আনার জন্য। তখন বলি আমি তাদের কিভাবে নেবো?
সেসময় তারা বলে এতকিছু বুঝার দরকার নাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো আপনি নিয়ে রাখেন। আমাকে কমিশনারসহ কোর কমিটির সবাই এ কথা বলেছে। এরপর আমি ডিবির রমনা বিভাগের ডিসি হুমায়ুনকে সমন্বয়ক তিনজনকে নিয়ে আসতে বলি। হুমায়ুন তাদের নিতে আসে। তাদের মোবাইল আগেই ডিজিএফআই নিয়ে গেছিলো।
সাবেক ডিবি প্রধান বলেন, পরবর্তী সময়ে রাত ২টা-তিনটার দিকে আমাকে ডিজিএফআইয়ের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফোন দিয়ে বলে সারজিসসহ আরও দুইজনকে ডিবি গেইটে আনা হয়েছে। আপনার কোনো এক কর্মকর্তাকে বলেন রিসিভ করতে। পরে আমি ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেনশাহ মাহমুদকে ফোন দিয়ে বলি রিসিভ করতে। পরে তাদের সাইবারের একজন এডিসি রিসিভ করে।পরের দিন ডিজিএফআই প্রধান আমাকে ফোন দিয়ে বলেন একটি মেয়ে (নুসরাত তাবাসসুম) খুব উৎপাত করছে তাকেও তুলে আনতে হবে। আমি মিরপুরের ডিসি মানস কুমার পোদ্দারকে বলি তাকে আনতে। এরপর আমাকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলো।
হারুন বলেন, এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সময় পুলিশ হাসপাতালে পরিদর্শনে যাওয়ার পরে আমাকে কাজের আপডেট জানতে চান এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। আমি বিস্তারিত তাকে পাঠাই। আগে তাদের বিভিন্ন সংস্থা মারধর করেছে। কিন্তু আমি তাদের (সমন্বয়ক) স্বজনদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছি। আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে আমি ভাতও খেয়েছি। ওই মেয়েটার মাকে এনে তার সঙ্গে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে আরেকটি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিলো আইন সচিবের সঙ্গে আমার কথার। আমি আইন সচিবকে বলি আমি তাদের ধরি নাই। কিন্তু আমাকে কালার করা হচ্ছে। তখন কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়ায় আসছিলো তাদের ডিবিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমি তো কোনো কূলই পাচ্ছি না। সাধারণ মানুষ জানতেছে তাদের আমি আটকে রেখেছি। আমি হারুন তাদের সঙ্গে কোনো খারাপ কথা বলিনি। ভিপি নুরের সঙ্গেও দুজন সমন্বয়কের কথা বলিয়ে দিয়েছি। তারা যাওয়ার পরে কিন্তু এখন পর্যন্ত বলে নাই হারুন তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমার ক্ষতিটা হলো মানুষ জানলো হারুন তাদের ধরে নিয়েছে।