সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৭ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনগুলোর মধ্যে বিধিমালা সংশোধন, সুবিধা বাড়ানো এবং কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, বর্তমানে চালু থাকা ৪টি স্কিম অব্যাহত থাকবে এবং নতুন কোনো স্কিম আপাতত চালু করা হবে না।
১৪ অক্টোবর, সোমবার, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সভার পরে পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা গনমাধ্যমকে জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পেনশন ব্যবস্থায় নিয়মিত সংস্কারের সুযোগ থাকে এবং কখনো বয়সসীমা কিংবা সুবিধা পরিবর্তিত হয়। তিনি বলেন, পেনশন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো বিশেষ জায়গায় পরিবর্তন আনার প্রয়োজন অনুভব করে, তা বিধিমালার মাধ্যমে করা সম্ভব। এমনকি আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও। এই পরিবর্তন কর্মসূচিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে বলে তিনি জানান।
গোলাম মোস্তফা আরো বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় প্রচারণার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়েছিল, তবে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচারণা সেভাবে সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয়ে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে কার্যক্রম পুনরায় চাঙ্গা করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বর্তমান ৪টি স্কিম— 'প্রগতি', 'সুরক্ষা', 'প্রবাস' এবং 'সমতা'— অব্যাহত থাকবে, এবং আপাতত নতুন কোনো স্কিম চালু করা হবে না। পেনশন স্কিমের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব করে চলতি মাসেই গ্রাহকদের হিসাবে জমা দেয়া হবে। গ্রাহকরা তাদের অ্যাকাউন্টে লগইন করে জমাকৃত অর্থ এবং অর্জিত মুনাফার পরিমাণ দেখতে পারবেন।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে। প্রথমে ৪টি স্কিম চালু করা হয়: 'প্রবাস', 'প্রগতি', 'সুরক্ষা', এবং 'সমতা'। পরবর্তীতে একটি নতুন স্কিম 'প্রত্যয়' চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
এ পর্যন্ত ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন গ্রাহক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন করেছেন। তাদের চাঁদা জমার পরিমাণ ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা, যার মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
সমতা স্কিম: এই স্কিমটি বিশেষভাবে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। এখানে নিবন্ধন করেছেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন, এবং চাঁদার মোট পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
প্রগতি স্কিম: বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এই স্কিমে ২২ হাজার ৪১০ জন নিবন্ধন করেছেন এবং ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকা জমা পড়েছে।
প্রবাস স্কিম: প্রবাসীদের মধ্যে অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এ স্কিমে ৯১০ জন নিবন্ধন করেছেন এবং ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার চাঁদা জমা দিয়েছেন।
সুরক্ষা স্কিম: অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য এই স্কিমে ৬৩ হাজার ১৭৪ জন ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: নিহত ৪৪ পুলিশ সদস্যের স্বজনরা কী বিচার পাবেন, যা বললেন বিশেষজ্ঞরা
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি দেশের জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এর কার্যক্রমে সময়ের সঙ্গে আরও পরিবর্তন আনা হবে।