তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির সভায় রামপাল-রূপপুর বাতিল করার দাবি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সংগঠিত সব জ্বালানি অপরাধের বিচারের দাবি জানিয়েছে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চুক্তি ও সম্ভাব্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়নেরও দাবি জানায়। বক্তারা বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে লুটেরামুক্ত করে জাতীয় সক্ষমতা বাড়ানো এবং সুলভ, স্বনির্ভর ও প্রাণ প্রকৃতি বান্ধব মহাপরিকল্পনা নিতে বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায়।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের রূপরেখা: বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব দাবি উপস্থাপন করা হয়। ‘তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভায় ৬ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
এসময় অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, অধ্যাপক এমএম আকাশ, অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা, অধ্যাপক ড. আনিস চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির শীর্ষ নেতা অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, এই জাতীয় কমিটি কাজ শুরু করেছিল গ্যাস রপ্তানির বিরোধিতা করে। বাংলাদেশের জন্য পারমাণবিক বিদ্যুতের দরকার নাই। রামপাল-রূপপুর বাতিল করতে হবে-এটা বন্ধ না হলে বাংলাদেশের চরম ক্ষতি হবে। এই সরকারের কয়েকজন সুন্দরবন রক্ষার আন্দোলন ও রামপাল কয়লা বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আশা করি তারা এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নেবেন।
আনু মোহাম্মদ বলেন, বিগত সরকার প্রধান জানত না -কাঠ কয়লা এবং খনিজ কয়লার মধ্যে পার্থক্য আছে। কারণ তিনি রামপাল কয়লার বিষয়ে একবার বলেছিলেন, তিনি ছোটবেলায় কয়লা দিয়ে দাঁত মেজে ছিলেন। তাই কয়লা কোনো ক্ষতি করবে না। কিন্তু আসল বিষয় হলো দাঁত মাজার সেই কাঠ কয়লা এবং খনিজ কয়লার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল ইসলাম বলেন, টন প্রতি কয়লা আমদানি ব্যয় কম-বেশি ১০০ ডলার হলেও পিডিবি সেখানকার কয়লা কেনে ১৮৫ ডলারে। এই বিষয়ে স্বচ্ছতা আনলে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমানো যাবে। বিদ্যুৎ খাতে বছরে যে পরিমাণ ব্যয় হয় তার থেকে বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় কমাতে হবে। দেশের চল্লিশটা বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফার্নেস ওয়েল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।
সভায় বক্তারা বলেন, জনগণ যেন সঠিক দাম, মাপ ও মানে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ, প্রাথমিক জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি সেবা পায় এবং দুর্নীতি-লুটের শিকার না হয়- সেজন্য বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা, ন্যায্যতা, সমতা, যৌক্তিকতা ও জবাবদিহিতা তথা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৬ দফা দাবিগুলো হলো- ১. জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য কমাতে স্বল্প মেয়াদে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ২. বিগত সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চুক্তি ও সম্ভাব্য চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। ৩. স্বৈরাচারী সরকারের সংগঠিত সকল জ্বালানি অপরাধের বিচার করতে হবে। ৪. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও বিদ্যুৎখাত পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। ৫. দেশীয় গ্যাস উত্তোলন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে, আমদানিকৃত গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমাতে হবে, এবং সাগরে গ্যাস উত্তোলনে বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।